
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে শুদ্ধি অভিযান চলছে। আমরা প্রথমে আমাদের নিজেদের ঘরের ভেতর থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি আগে নিজেদের ঘরকে শুদ্ধ করতে দুর্নীতি মুক্ত করতে, আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুবাগিচায় এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। যারা অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদন করেন তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
পুলিশের দুর্নীতির বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুরুতে মোটিভেশনাল এক্টিভিটিস এবং ডিসিপ্লিন নিয়ে কাজ করছি। আর দ্বিতীয় হচ্ছে পুলিশে ‘ব্রুটালিটি’ বা নিষ্ঠুরতা আমরা চাই না। আমরা চাই না পত্রপত্রিকায় পুলিশের ব্রুটালিটি নিয়ে খবর ছাপা হোক। আমরা খবর হতে চাই না।
পুলিশের কাছে অসংখ্য আইনগত ক্ষমতা রয়েছে। যেখানে আইনগত ক্ষমতা রয়েছে তাহলে কেন পেশী শক্তি ব্যবহার করতে হবে? মাথা ও বিবেকের শক্তি, আইনের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
বাহিনীর সদস্যরা যদি পুলিশের বাইরে গিয়ে দায়িত্বের ঊর্ধ্বে থেকে কোনো অপকর্ম করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। পুলিশের লক্ষ্য, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা ব্যত্যয়ে শূন্য সহিষ্ণুতা।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বেনজীর আহমেদ বলেন, ভালো কাজের উৎস চাই এবং যে সদস্য খারাপ কাজ করবেন তা বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরবেন সাংবাদিকরা, তাও চাই। বিচারের আগে বিচার করবেন না। অনেক সময় আমরা দেখি যে বিচারের আগে বিচার শেষ।
গতকালও একটি প্রতিবেদন দেখেছি কিন্তু বেশিরভাগ তথ্য সঠিক ছিল না। কিন্তু সমস্যা হল আপনি যখন একটি জিনিস ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে দেখিয়ে ফেলেন তখন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ দেখেন বাংলাদেশের বাইরে প্রচুর মানুষ দেখেন। যখন আপনি লিখেন তখন কোটি কোটি মানুষ তা পড়েন, কারেকশন দেয়া হলেও।
সাংবাদিকরা কোটি কোটি মানুষকে ‘মোটিভেট’ করতে পারে জানিয়ে আইজিপি বলেন, সাংবাদিকরা ওপিনিয়ন বিল্ড করেন এবং সমাজের গতিপ্রকৃতি অনেক সময় পরিবর্তন হয়ে যায়।
যেহেতু আপনারা ওপিনিয়ন বিল্ডার, মুহূর্তের মধ্যে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারেন, সেজন্য আপনাদের কলমের যে শক্তি সে শক্তি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন থাকবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
আইজিপি বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীতে যদি কেউ খারাপ কাজ করেন, সে অন্য কাজের জন্য ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রে চরম নিষ্ঠুরতা দেখানো হয়। আবার যদি ন্যায় ও ন্যায্য সংক্রান্ত সাহায্য প্রয়োজন হয়, তখন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।
বাংলাদেশ অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই অগ্রযাত্রায় আমাদের সব ক্ষেত্রেই শুদ্ধতা দরকার। তাই আমরা চেষ্টা করছি আগে নিজেদের ঘরকে শুদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে।
মাদকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা কঠোরভাবে কাজ করছি। পুলিশের মধ্যে যদি কোনো মাদকসেবী থাকে তাহলে তাকে বাহিনী থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে।
আমরা রেনডমলি ডোপ টেস্ট করছি। পুলিশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। আমরা আমাদের ঘর পরিচ্ছন্ন করতে চাই। এছাড়াও কেউ মাদক সেবন কারেন না কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িত, এমন পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও আমরা শূন্য সহিষ্ণুতা বাস্তবায়ন করতে চাই।
করোনা মোকাবিলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর সরকারের নির্দেশনায় আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবিলা করেছি। এ বছরেও একইভাবে করোনা মোকাবিলায় কাজ করছি। পশ্চিমা বিশ্ব করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খেয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে আধুনিক রিসোর্স না থাকা সত্ত্বেও সরকারের নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।