‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ অনুযায়ী ১১ বছর বয়স না হওয়ার কারনে গোপালগঞ্জের অধিকাংশ শিশু শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে অনেক অভিভাবক জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য ছুটছেন বিভিন্ন দপ্তরে।
বিভিন্ন স্কুল ও কম্পিউটারের দোকানগুলো ঘুরে জানা গেছে,‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’আনুযায়ী প্রাথমিকে ভর্তির ন্যূনতম বয়স ধরা হয়েছে ৬ বছর। সেই হিসেবে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ বছর।
এমন পরিস্থিতিতে ‘জন্ম নিবন্ধন’ সংশোধন করে জটিলতা নিরসন করতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে ছুটছেন অভিভাবকরা। তাদের আশঙ্কা—বয়স সংশোধন করে এখনই ভর্তি করাতে না পারলে অনেক শিক্ষার্থীর লেখা-পড়ায় ধারাবাহিকতা ব্যাহত হতে পারে। যা তার পরবর্তী জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন-ফি জমা-সংক্রান্ত নিয়ম প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে। এরই আলোকে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। আবেদনের শেষ সময় ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা। ৩০ ডিসেম্বর অনলাইন লটারির মাধ্যমে জানা যাবে—কে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে।
এদিকে, সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ সময় বয়স শিথিল করে সন্তানদের ভর্তি করার দাবি জানান তারা। পরে এই অভিভাবকরা গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. ইলিয়াছুর রহমানের কাছে এই সমস্যা সমাধানে একটি স্মারকলিপি দেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক অভিভাবক বলেন, ‘প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সময় সন্তানদের বয়স কমিয়ে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করতে ১১ বছর ঠিক করায় সন্তানদের বয়স ১১ বছরের কম হচ্ছে। যে কারণে ভর্তির আবদেন গ্রহণ করছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।’ এবারের মতো বয়সের নিয়মনীতি তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীরা যেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে, সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
কম্পিউটার দোকান মালিক ও কম্পিউটার অপারেটর অসিম পান্ডে বলেন, ‘অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে ছুটে আসছেন। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীর বয়স ১১ বছরের কম। যে কারণে তাদের আবেদন সফটওয়্যার গ্রহণ করছে না। তাদের নতুন করে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ছুটে যেতে হচ্ছে।’
এই সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খায়রুল আনাম আফতাবুর রহমান হেলালী বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ১ম শ্রেণিতে ভর্তির ন্যূনতম বয়স ৬+ বছর। সে অনুযায়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছুদের বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১১+ বছর। এই শর্তের কারণে বয়স-স্বল্পতায় পড়ে এই বছর অনেক শিশু ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না।’
তবে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।