
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় হানিফ পরিবহনের ড্রাইভার-হেলপার-সুপারভাইজারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চারটি নির্দেশনা দেন বিচারক।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, সড়কগুলোতে প্রতিদিন প্রাণ দিচ্ছে বহু মানুষ। কোনোভাবেই যেন মৃত্যুর এ মিছিল থামছে না। এ মামলার ঘটনা দুঃখজনক ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে চিকিৎসা দেওয়ার বদলে ২০১৮ সালের ২১ জুলাই অচেতন অবস্থায় ভাটেরচর ব্রিজ থেকে নিচে ফুলদি নদীতে ফেলে দেয় ড্রাইভার মো. জামাল হোসেন, বাসের সুপারভাইজার জনি ও বাসের হেলপার ফয়সাল। অথচ দুর্ঘটনায় আহত পায়েল তখন জীবিত ছিল। পরে মুন্সীগঞ্জের ভাটেরচর ব্রিজের নীচের ফুলদী নদী থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এরকম অনেক পায়েল মারা যাচ্ছে যাদের কথা আমরা জানতে পারি না।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যা বলাটা বোধ হয় ভুল নয়। অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়াভাবে বাস চালানো, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি ইত্যাদি কারণেই এই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কে প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু নিছক কি দুর্ঘটনা নাকি হত্যা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বসাধারণের মনে।
এসময় বিচারক জানান, ট্রাফিক আইন অনুযায়ী নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এসময় চারটি নির্দেশনা দেন বিচারক। ৪ নির্দেশনাগুলো হলো-
১. গাড়িচালক, সুপারভাইজার, হেলপারদের গাড়ি চালাতে দেওয়ার আগে তারা মাদক সেবন করেছে কিনা- এজন্য ডোপটেষ্ট করতে হবে। গাড়ি ছাড়ার কাউন্টারে, পধে রাস্তায় বিরতির স্থানে এবং গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছার স্থানে অর্থাৎ এই তিন স্থানেই গাড়ির চালক, সুপারভাইজার, হেলপাদের ডোপটেষ্ট করতে হবে।
২. গাড়িচালক, সুপারভাইজার, হেলপারদের প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে কর্কশ ও অভদ্র আচরণ করেন। এক্ষেত্রে গাড়ির ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপারদের অবশ্যই যাত্রীদের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। গাড়িচালক, সুপারভাইজার, হেলপারদের গাড়ি চালানোর বিষয়ে এবং যাত্রীদের সঙ্গে কাউন্সিলিংয়ের বিষয়ে উচ্চতর ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. মহাসড়কে প্রতি তিন কিলোমিটার পর পর গাড়িচালক, সুপারভাইজার, হেলপার ও যাত্রী সাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফ্রি আধুনিক বাথরুম ও টয়লেট স্থাপন করতে হবে। তবে এজন্য বাস মালিকরা সরকারের সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা পূর্বক সরকার নির্ধারিত হারে বার্ষিক চাঁদা দিতে হবে সরকারকে।
৪. মহাসড়কে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। উল্লেখিত বিষয়গুলোর বিষয়ে বাস মালিক, ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপার এবং যাত্রী সাধারণকে সচেতন হবে হবে বলে উল্লেখ করেন বিচারক।