
রাজধানীতে বাসে সিরিজ অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণসহ বেশ কিছু অভিযোগে ৯ থানায় ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বাস পোড়ানোর অভিযোগে ৯টি মামলা হয়েছে ৬ থানায়। বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয় ৪৪৬ জনকে। সব মিলিয়ে আসামি ৫ শতাধিক।
এদিকে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ শনিবার ও কাল
রবিবার দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
কর্মসূচি অনুযায়ী, শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং রবিবার সারাদেশে জেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে দলটি।
বৃহস্পতিবার বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ওইদিনই এবং গতকাল শুক্রবার ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ওই ৯ মামলা করা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলাগুলোয় আসামির তালিকায় রয়েছেন ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বিএনপির এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী। রয়েছেন অজ্ঞাতনামা আসামিও।
গত দুদিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৩ মামলায় অভিযুক্ত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল তাদের মধ্যে ২৮ জনকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ধীমানচন্দ্র ম-লের আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত ২৮ জনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন ।
আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা গেছে, শাহবাগ থানার দুই মামলায় ৬ আসামিকে তিনদিন করে রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। পল্টন থানার মামলায় দুজনকে ৩ দিন এবং সাত জনকে ৫ দিনের রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মতিঝিল থানার দুই মামলার একটিতে একজনের দুদিন এবং অন্যটিতে অন্যজনের তিন দিনের; বংশাল থানার মামলায় দুজনকে দুদিন; কলাবাগান থানার মামলায় দুজনকে দুদিন; সূত্রাপুর থানার মামলায় চার জনকে তিন দিন; খিলক্ষেত থানার মামলায় দুজনের দুদিন; তুরাগ থানার মামলায় একজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধারণা, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী কোনো পক্ষ নাশকতার উদ্দেশ্যে একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দিয়েছে। নির্বাচনী এলাকার দুটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ও ভোটগ্রহণের সময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা এক সূত্রে গাঁথা। এসব ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ইন্ধন রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। অগ্নিসংযোগ করা বাসগুলোয় ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১২ জন যাত্রী ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারি এজেন্টরাই এসব ঘটনায় জড়িত। গতকাল এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উপনির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী নাশকতা ঘটিয়েছে মন্তব্য করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি সরকারি বাসসহ ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় ডিএমপির ৬ থানায় (পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, ভাটারা, কলাবাগান ও বংশাল) পুলিশ বাদী হয়ে ৯টি মামলা করেছে।
এর বাইরে অন্যান্য অভিযোগে উত্তরা পূর্ব, তুরাগ ও বিমানবন্দর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এসব মামলায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল গ্রেপ্তার ২৮ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে নাশকতার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। কারা সরাসরি জড়িত, কারা মদদ দিয়েছে, তাদের ব্যাপারেও তদন্ত চলছে। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান ওয়ালিদ হোসেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণে মনে হয়, বৃহস্পতিবারের ঘটনাগুলোর সঙ্গে ২০১৫ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের যথেষ্ট মিল রয়েছে। বাসে আগুনের ঘটনায় পাওয়া বিভিন্ন আলামতের সঙ্গে আগের আলামতগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর যেসব স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগ হয়েছে সেসব স্থানে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে বিএনপির কয়েকটি মিছিলও হয়েছে। এ মিছিল ও অগ্নিসংযোগ একই সূত্রে গাঁথা। একটি অডিও রেকর্ডে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা কেন্দ্র করে কথাবার্তা রয়েছে। সব বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।
বাসে আগুনের ঘটনায় মতিঝিলের দুই মামলায় মতিঝিল থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক ফজলু, থানা যুবদলের সভাপতি ইকবাল হোসেন বাবু এবং যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের শখানেক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। শাহবাগ থানার মামলাগুলোতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এসএম জিলানীসহ ৭৪ জন আসামি। পল্টন থানার দুই মামলায় আসামি ৫৭ জন। বংশাল থানার মামলায় আসামি ৫৬ জন। বিমানবন্দর থানার মামলায় ২৮ জন আসামি। ভাটারা থানার মামলায় বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি শাহনুর আলম ও নজরুল ইসলাম, ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বাবু, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর ইসলাম মিল্টন, রূপনগর থানা যুবদলের সভাপতি জনসহ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ৯৫ জনের নাম রয়েছে। অন্যান্য থানার মামলাগুলোতেও আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।