গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ৬ নভেম্বর সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সাঁওতালরা সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন।
৬ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাঁওতাল পল্লীতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপর নির্মম নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগকারীগের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে স্লোগান দেয়া হয়। মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা দোষীদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি প্রকৃত অপরাধীদের তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এ সময় বক্তারা সাঁওতালদের জমি বুঝিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে ৭দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিসমূহ হলো- গোবিন্দগঞ্জে বাগদা ফার্ম এর রিক্যইজিশন করা এক হাজার ৮শ ৪২ দশমিক ৩০ একর জমি আদিবাসিদের ফেরত দিতে হবে; আদিবাসীদের সম্পত্তি সম্পত্তি রিক্যুইজিশন করা আইন বহির্ভূত হওয়ায় আলাদা ভূমি কমিশন গঠন করে তাদের সম্পত্তি তাদের ফেরত দিতে হবে; সাঁওতাল পল্লীতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট এবং গুলি করে হত্যায় জড়িতদের ইন্ধনদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিহত-আহত পরিবারদের ক্ষতিপূরন দিতে হবে; ৬ নভেম্বরের ঘটনায় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে; ১৯৪৮ সালের চুক্তি মোতাবেক খেসারতসহ আগের মালিকদের জমি ফেরত দিতে হবে; সাঁওতাল পল্লিতে অগ্নি সংযোগকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং ২০০৪ সালে রচিক বন্ধের পর প্রভাবশালীদের মাঝে লীজের নামে অর্থ আত্মসাৎকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবীও রয়েছে।
বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির ডা. ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী সংহতি পরিষদের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম (বাবু), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা শরেন, নওগা জেলা শাখার সভাপতি মহসিন রেজা ও বুলবুল আহম্মদ প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বাগদা ফার্ম এলাকায় সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশের গুলিতে ২৫জন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হয়। এদের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ-সাঁওতাল সংঘর্ষে আরও প্রায় ৩০ জন সাঁওতাল আহত হন। এসময় তাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত ৩ জন হলেন- শ্যামল হ্রেবম, মুঙ্গল মাড্ডি, রমেশ টুডু। হত্যাকাণ্ডের চার বছর পেরিয়ে গেলেও আসামীরা আজও অধরা রয়েছে।