
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক শারদীয় দুর্গা পূজা ২০২০ এর সরকারি অনুদান প্রদানে অনিয়ম-দূর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাৎকারী গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাস্টি বিশ্বনাথ দাস বিটুকে অপসারণসহ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে মঙ্গলবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গাইবান্ধা জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এই সংবাদ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহ-সভাপতি দীপক কুমার রায় লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টি প্রতি বছর শারদীয় দূর্গা পূজায় কিছু কিছু মন্দিরে ট্রাস্টের মাধ্যমে সরকারি অনুদান প্রদান করে থাকে। বিগত বছরগুলোতে গাইবান্ধার ট্রাস্টের দায়িত্ব পালনকারি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উজ্জল প্রসাদ কানু বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন মন্দিরের নামে অবৈধভাবে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। ফলে গাইবান্ধা, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার পুজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ তার এই অনিয়ম-দূর্ণীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে এবং দূর্ণীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম মন্ত্রনালয় কর্তৃক তাকে বরখাস্ত করে রংপুরের বদরগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটুকে গাইবান্ধা, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার নতুন ট্রাস্টি নিয়োগ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, গাইবান্ধাবাসি আশা করেছিল নতুন ট্রাস্টির মাধ্যমে এ জেলার মন্দিরগুলো অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়ে উন্নয়ন মূলক কাজ করতে পারবে। কিন্তু চলতি বছর দূর্গা পুজায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টির মন্দির ভিত্তিক গণশিক্ষার সহকারী পরিচালক কর্তৃক জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি রনজিৎ বকশি সূর্য্য ও সাধারণ সম্পদক দীপক কুমার পালকে জানানো হয়, এবার জেলার সাতটি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভার মোট ৫৫৮টি দূর্গা পুজার মধ্যে থেকে মাত্র ৪০টি মন্দিরের নাম ট্রাস্টি বিশ্বনাথ বিটু চেয়েছেন। কিন্তু জেলা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি ও সম্পাদকের পক্ষ থেকে ৫৫৮টি পুজা মন্ডপের মধ্যে ৪০টি পুজা মন্ডপের নাম দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে সহকারী পরিচালক গাইবান্ধায় চলতি বছরের জন্য মোট ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। উক্ত বরাদ্দকৃত টাকা থেকে ওইসব মন্দিরের ব্যাংক হিসাব নম্বরে প্রতি মন্দিরে ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে মর্মেও জানান হয়। সে অনুপাতে কল্যাণ ট্রাস্টির নীতিমালা মোতাবেক গাইবান্ধা জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে জেলার মোট ৩৭টি মন্দিরের অনুকূলে ২ লাখ টাকা বরাদ্দের তালিকা সহকারী পরিচালকের বরাবরে প্রেরণ করেন। কিন্তু বর্তমান গাইবান্ধা জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্রাস্টি বিশ্বনাথ দাস বিটু কল্যাণ ট্রাস্টের সমস্ত নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ৭৫টি চেকের মাধ্যমে ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত তার নিজস্ব লোকের মাধ্যমে বিতরণ করেন। শুধু তাই নয়, তার শ্বশুর বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলা হওয়ার সুবাদে সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ি উপজেলায় ৪১টি চেক বিতরণ করে। ৪১টি চেকের মধ্যে অধিকাংশ চেক তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে অনেক মন্দিরের কোন ব্যাংক হিসাব নম্বর পর্যন্তও নেই।
উল্লেখ্য যে, সাদুল্যাপুরের খোর্দ্দরুহিয়া ভদ্র মন্দিরে তিন শতক জমি তার আত্ময়ের হওয়ায় ১ম ধাপে ৩ লাখ টাকা মন্দির নির্মাণের বরাদ্দ করে সেই টাকার কাজ সমাপ্ত না হতেই পূনরায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। এছাড়াও একই উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের দুটি মন্দিরে দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হলেও একটি তার আত্মীয় হওয়ায় বরাদ্দ দেন এবং অপরটিকে কোন বরাদ্দও দেয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা পুজা উদ্যাপন পরিষদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অজয় কুমার সরকার, গোপাল চন্দ্র পাল, সুদেব কুমার চৌধুরী, মাখন চন্দ্র সরকার, সুজিত বকসী, প্রভাত সরকার, নিমাই কুমার ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ বর্মন, গৌতম কুমার চন্দ্র, সুজন প্রসাদ, রকি দেব, রঞ্জন সাহা, সত্য নারায়ন চৌহান, চঞ্চল সাহা, বাবলু পাল, সুভাস ঘোষ, মোহন লাল মন্টু, দ্বীপ মুন্সী, প্রতিম প্রামানিক, শ্যামল কুমার সরকার, অশ্বিনী কুমার বর্মন, মতিলাল চৌহান, শংকর চক্রবর্ত্তী, অজয় কুমার সরকার, বিমল চন্দ্র সরকার, দিলীপ কুমার সাহা, সুবীর সাহা, রমেশ্বর সাহা, মানিক, রাজেশ কুমার দে, বিলাশ চন্দ্র মহনত্ম ও দীপ্ত চৌধুরী প্রমুখ।