
আলমগীর ইসলাম বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
এমপি শিবলী সদিক জানায়, ঝুলন্ত ব্রিজ হলে কাঠের ব্রিজের সাথে বিলের পাড় ঘেঁষে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। ধানজুড়িতে রয়েছে প্রায় ১শ বছর পুরনো ধানজুড়ি ক্যাথলিক চার্চ ও কুষ্ঠ হাসপাতাল। আমার মনে হয় যদি দিনাজপুরের বিরামপুর অংশে ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মিত হয় ও তার সাথে শালবাগানের পাশ দিয়ে কাঠের ব্রিজের সংযোগ হয় তাহলে স্বপ্নপুরীকে ঘিরে বিরামপুর-নবাবগঞ্জঅঞ্চল উত্তরবঙ্গের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।

দেশের বিভিন্ন অংশের সাথে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত চমৎকার। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবার পথে, সাথে সড়ক ও মহাসড়কগুলোও প্রশস্ত হচ্ছে, রেল যোগাযোগ রয়েছে, রয়েছে অনেক স্থলবন্দর। সুতরাং পর্যটনের সাথে এখানে গড়ে উঠবে মার্কেট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহনসহ বিভিন্ন ব্যবসা। বিরামপুর উপজেলার জেলার দাবি আরও জোরালো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার জানায়, বিরামপুর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই দেখলাম বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন নবাবগঞ্জ উপজেলায় আশুরার বিলের উপর স্থাপিত কাঠের ব্রিজ দেখতে আসেন। আশুরার বিলের একটা অংশ বিরামপুর উপজেলার ধানজুড়িতেও আছে। আমার নিজের আগ্রহ তো ছিলই, সাথে তিনিও আশুরার বিলের বিরামপুর অংশে দর্শনীয় কিছু করার জন্য সহযোগিতা করছিলেন।
আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি এবং নিজে ৩ বার পরিদর্শন করেছি। সিদ্ধান্ত নিলাম ধানজুড়ি অংশে একটা ঝুলন্ত ব্রিজ করবো। সাথে ধানজুড়ি গ্রাম থেকে শুরু করে শালবনের ভিতর দিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার পাশে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১ হাজার গাছ লাগানো হবে। শালবনের ভিতর দিয়ে পর্যটকদের চলাচলের জন্য রাস্তা মেরামত করা হবে।
বিলে শাপলা, পদ্মফুলের আলাদা জায়গা করা হবে, শালবনে পাখির অভয়াশ্রম বানানো হবে । বনে হরিন, বানরসহ অনেক প্রাণি বসবাস করবে। আমার পুরো পরিকল্পনা নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও জাতীয় সংসদ সদস্য শিবলী সদিক এমপিকে সাথে নিয়ে সবাই ইতিবাচকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করলেন এ কাজের অগ্রযাত্রা দ্রুত শুরু করা হবে।
পর্যটন শিল্প হবে এ এলাকার মানুষের অর্থ উপার্জনের অন্যতম উৎস। তার উপর ধানজুড়িতে অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এখানকার পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করবে। গত শনিবার দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম এসেছিলেন আশুরার বিলের বিরামপুর অংশের সৌন্দর্যবর্ধন কাজের উদ্বোধন করতে। ১হাজার বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় গাছ রোপন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার জনায়, হয়তো পুরো পরিকল্পনা খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হবে না, হয়তোবা আমিও এর শেষ দেখে যেতে পারবো না। কিন্তু আমি কল্পনা করি একদিন আমার স্বপ্নগুলো সত্যি হবে। এ উপজেলার মানুষ মনে রাখবে একজন ইউএনও এসেছিলেন যিনি এভাবে কল্পনা করেছিলেন।
উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষের সংখ্যা দাপ্তরিকভাবে আমরা যা ব্যবহার করি বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি। তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেটা দাপ্তরিক সংখ্যার সাথে মিল রেখে, তাতে এ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণের জন্য গত এনজিও সভায় সিদ্ধান্ত নিলাম, সারা উপজেলায় একটা জরিপ চালানো হবে। বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় আমরা এ উপজেলার প্রকৃত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষের সংখ্যা জানতে চাই।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিওকে জরিপ ফরম প্রদানের মাধ্যমে এ জরিপ কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর জেলা প্রশাসক পুরো চার্চ ও সংলগ্ন কুষ্ঠ হাসপাতাল, ধানজুড়ি প্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করেন। সকল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিরামপুর উপজেলার সম্মানিত চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু, ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাউল ইসলাম মন্ডল, খানপুরের ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী, চার্চের ফাদার, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সভাপতি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মী, ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিও কর্মীবৃন্দ, বিরামপুর ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবীবৃন্দ, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তি¦ক জনগোষ্ঠীর জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত একটি ঘর পরিদর্শন করেন ও কাজের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ঘরের মালিক মারচেলিউস সরেন অনেক খুশী এবং প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করেন।