ভারতের কেরালার কোঝিকোড বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১২৩ জন। এর মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় ওই বিমানে ১৯১ জন যাত্রী ছিলেন। স্থানীয় বিজেপি সাংসদ কে যে অ্যালফোনস জানিয়েছেন, একজন পাইলট ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। নিহতের পাশাপাশি বহু যাত্রীর আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রায় ৫০ জন যাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিমানটিতে ১৮০ জন যাত্রী, ১০ জন শিশু, দুজন পাইলট এবং পাঁচ জন কেবিন ক্রু ছিলেন। বিমানটি বন্দে ভারত প্রকল্পের অংশ যা করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে বিদেশ থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার উদ্দেশে চলাচল করছে। বর্তমানে সেখানে উদ্ধার কাজ চলছে। ঘটনাস্থল থেকে মেলা ছবিতে দেখা গিয়েছে বিমানটি দু’টুকরো হয়ে রানওয়ে ও তার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কিছু যাত্রী আহত হয়েছেন এবং তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটের দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। ওই অঞ্চলে প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেই এই দুর্ঘটনা। হতাহতের বিষয়ে এখনও বিশদে কিছুই জানা যায়নি। তবে বিমানটিতে আগুন লাগেনি এবং যাত্রীদের সকলকে উদ্ধার করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কোঝিকোড় বিমানবন্দর কেরলের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক টার্মিনাল এবং বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিমান ওঠানামা করে। এ নিয়ে টুইট করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এতে তিনি লিখেছেন, কেরালার কোঝিকোড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে দুঃখিত। এনডিআরএফকে (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স) দ্রুত জায়গায় পৌঁছতে এবং উদ্ধারকাজে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছি।
কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা ভারতীয় সময় রাত এগারোটায় জানিয়েছেন যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে যে তথ্য তার কাছে এসেছে, তাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শৈলজা বলছেন, চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়েছেন যে বেশিরভাগ যাত্রীকেই বাইরে থেকে দেখে আঘাত বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর পরে দেখা যাচ্ছে ইন্টারনাল হেমারেজ হয়েছে তাদের।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের যে দলটি কোঝিকোড বিমানবন্দরে উদ্ধারকাজে নেমেছে, তার কমান্ডিং অফিসার রেখা নামিয়ার জানিয়েছেন, বিমান থেকে বেশ কয়েকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি সব যাত্রীকেই বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, আহতদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যতক্ষণ না এনডিআরএফ সদস্যরা বিমানটির ভেতরে শেষবার খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন, ততক্ষণ আমরা উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে বলতে পারব না। তবে মনে হচ্ছে বিমানটির ভেতরে আর কেউ আটকে নেই।
কী জানা যাচ্ছে..
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি দুবাই থেকে বিদেশে আটকিয়ে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসছিল।
ভারতের অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ডি জি সি এ জানিয়েছে যে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই বিমানটি অবতরণ করছিল। দৃশ্যমানতা ছিল ২০০০ মিটার।
বিমানটি রানওয়ে ওয়ান জিরো ছোঁয়ার পরে না থেমেই রানওয়ের শেষ মাথায় চলে যায় আর তার পরে সেটি ছাড়িয়ে সামনের উপত্যকায় গিয়ে পড়ে। তখনই বিমানটি দুটো টুকরো হয়ে যায়।
কেরালায় ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে — বন্যা চলছে সেখানে। আজই ইদুক্কি জেলায় ভূমিধসে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে — তারপর রাতে বিমান দুর্ঘটনা।
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট IX 1344 বিমানটিতে ক্র্যু ও যাত্রী মিলিয়ে ১৯১ জন ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। এদের মধ্যে ১০ জন শিশুসহ ১৭৪জন যাত্রী, দুজন পাইলট এবং ৫ জন কেবিন ক্রু।
ভারতের একজন বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন মোহন রঙ্গনাথন এন ডি টি ভি চ্যানেলকে একটু আগেই বলছিলেন যে তিনি নয় বছর আগে কোঝিকোড বিমানবন্দরের ওই রানওয়েটি পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিলেন, যেখানে এই রানওয়ে ওয়ান জিরোর নিরাপত্তায় যে বড়সড় ঝুঁকি আছে, সেটা উল্লেখ করেছিলেন।
তিনি বলছেন ওই রানওয়েটি ঢালু এবং তারপরেই প্রায় দুশো মিটার গভীর উপত্যকা.. কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে পৌছনও কষ্টকর হবে বলেও জানান ক্যাপ্টেন রঙ্গনাথন।