
২০২০-২১ অর্থ বছরের কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা তা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করে তা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলটি মনে করে, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব মূলত দলীয় এবং দলীয় পছন্দের লোকদের কালো টাকার পাহাড়কে সাদা করার সুযোগ দেয়ার জন্য বাজেটে এ প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি যারা অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জন করে কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নিতি দমন কমিশনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
আজ শুক্রবার (১২ জুন) দলের পক্ষে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণ ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৯শত ৮০ কোটি টাকা- যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৯০হাজার কোটি টাকা। বাজেটের প্রায় ৩ ভাগের ১ভাগই ঋণ নির্ভর। এই ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই সরকারের নাভিশ্বাস উঠে যাবে।
এ বাজেটের মাধ্যমে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে সরকার ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার ১৯টি প্যকেজে ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন- যা সরবরাহের দায়িত্ব মূলত ব্যাংকগুলোর। ব্যংকের উপর এমনিতেই তারল্য সংকট রয়েছে; বাজেটে ব্যাংক থেকে ৮৪ লাখ ৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। সরকারের প্রস্তাবিত এ বাজেটে দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেংগে পড়বে।’
গোলাম পরওয়ারল বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত গোটা দেশ। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছেন মানুষ। করোনায় আক্রান্ত রোগীরা এ হাসপাতাল থেকে সে হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরনের ঘটনাও ঘটছে। চিকিৎসা ব্যবস্হার এ ভঙুর পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪১ হাজার ২৭কেটি টাকা- যা বাজেটের ৭.২ শতাংশ। গোটা জাতি যখন অপর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণ, দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, তখন এ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ মোটেই যথেষ্ট নয়। চলমান পরিস্থিতি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটের ১০ শতাংশ হওয়া দরকার।’
জামায়াত মনে করে, দারিদ্র দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় গুরুত্ব দিলেও এক্ষেত্রে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা বস্তবায়নের কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়নি। বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহ সকলের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার গতানুগতিক বক্তব্য ছাড়া নতুন কোন ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মহীন হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান অস্বীকার্য। প্রবাসীদের মধ্যে যারা কর্মহারা হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করছেন তাদের পুনর্বাসনে বাজেটে কোন দিক নির্দেশনা নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে, সেই সাথে দেশের কর্মক্ষম বেকার লোকদের সমখ্যা ত্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কাজ হারিয়েছে ৬২ শতাংশ মানুষ। অথচ অর্থমন্ত্রী ১৪ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়েছে বলে তার বক্তব্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য পেশ করেছেন। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর আয় ও কর্মসংস্থানের কোন দিক-নিদের্শনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।’
সংগঠনটি মনে করে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। অথচ আমরা লক্ষ্য করছি জাকাতের টাকার উপর কর আদায় করা হয়। আমরা জাকাতের টাকা করমুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাজেটে কোন বরাদ্দের কথা বলা হয়নি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, আবাসন ও স্বাস্থ্য বীমার বিষয়ে বাজেটে ব্যবস্হা থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, গত বছরের বাজেটও সরকার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট বস্তবায়ন নিয়েও সংশয় রয়েছে। সর্বোপরি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর সুশাসন, সচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সকল স্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি। সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট জনবান্ধব নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের সীমিত আয়ের বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থককে উপেক্ষা করা হয়েছে।