
কৃষি ফসল এবং কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের রক্ষার চার দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট। রবিবার ১৯ এপ্রিল সারাদেশে একযোগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
রবিবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট গাইবান্ধা জেলা সংগঠক জাহেদুল ইসলাম, বাসদ (মার্কসবাদী)জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক এডভোকেট নওশাদুজ্জামান নওশাদ, শামীম আরা মিনা ও সবুজ মিয়ার সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এ স্মারকলিপি দেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করা হয়, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মতই বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। আরো আগে থেকে সাবধানতা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহন করলে পরিস্থিতি এরকম হতো না। প্রথম চীন এবং পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরলেও আমরা নিরাপদ ছিলাম। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে সেটা বেশিদিন সম্ভব না। দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসহ নানাবিধ কারনে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়াও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে কর্মরত। ফলে শুরুতে জানুয়ারি থেকেই যদি আমরা বিদেশ ফেরত সকলের কোয়ারেনটাইন বাধ্যতামূলক করতে পারতাম, তাহলে আজকের এই পরস্থিতি হতো না। আজকের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করতে না পারলে ভবিষ্যতে দেশ আরো ভয়ংকর বিপদের দিকে যাবে।এখন প্রয়োজন জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের টেষ্ট, আই সি ইউ-ভেন্টিলেশনের আয়োজনসহ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।
সর্বোচ্চ সংখ্যক টেষ্ট এবং আক্রান্তদের আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়াই এই মুহুর্তে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার প্রধান কাজ আর এজন্য অবশ্যই ডাক্তার-নার্সসহ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সকল শ্রমজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিনামুল্যে তিন মাসের খাদ্য নিশ্চিত এবং নুন্যতম এক মাসের খাদ্যসামগ্রী ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিয়ে সারাদেশ লকডাউন করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে গোটা পৃথিবীর মত বাংলাদেশও শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ, ব্যাবসা-বাণিজ্য অচল। কবে সচল হবে সেটা অনিশ্চিত। ফলে পৃথিবীজুড়েই এক ভয়ংকর মহামন্দা আসবে। আইএমএফ বলছে এই মহামন্দার মাত্রা ১৯৩০ দশকের মহামন্দাকেও ছাড়িয়ে যাবে। ফলে দুর্ভিক্ষ অত্যাসন্ন। এ অবস্থায় বাঁচার একমাত্র পথ হতে পারে কৃষি। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, এখানকার জমি খুবই উর্বর। আমরা যদি কৃষিক্ষেত্রকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহন করতে পারি, তাহলে আগামী সময়ের দুর্ভিক্ষের কবল থেকে দেশের মানুষদের রক্ষা করতে পারবো। এই মুহুর্তেই কিছু সরকারি উদ্যোগ কৃষিক্ষেত্রের জন্য জরুরী প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই হাওর এলাকায় ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। যেকোনো সময় কালবৈশাখী ঝড় অথবা পাহাড়ি ঢলে বন্যা হতে পারে। ফলে দ্রুত ধান কাটা-মাড়াই প্রয়োজন। কিন্তু লকডাউনের কারনে ক্ষেতমজুররা যাতায়াত করতে পারছেনা। ক্ষেতমজুরের অভাবে দ্রুত ধান কাটা-মাড়াই করা যাবেনা।
হাওরাঞ্চলের পরেই যশোর-কুষ্টিয়া-খুলনা এবং তারপরেই বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। একই ধরনের সংকট এই অঞ্চলগুলোতেও হবে। ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর পরই শুরু হবে ন্যায্য দাম না পাওয়ার সমস্যা। প্রতিবছরই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সামান্য পরিমান ধান ক্রয়ের জন্য সরকারি যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, দুর্নীতি ও ক্রয় পদ্ধতির জটিলতার কারনে সেটাও কৃষকরা পায়না। লকডাউন থাকায় এবছর সবজি চাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এমতাবস্থায় কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে বিরাজমান সংকট সমাধানে নিম্নলিখিত দাবীসমুহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আপনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি।
দাবীসমুহ:
এক. হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার ধান দ্রুত কাটা-মাড়াইয়ের জন্য উত্তরাঞ্চল থেকে সরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ক্ষেতমজুরদের নিয়ে যেতে হবে। কৃষকদের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে।
দুই. সবজি চাষীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। হাটে-হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত ধান ক্রয় করতে হবে।
তিন. ক্ষেতমজুর-শ্রমজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষদের সরকারি উদ্যোগে বিনামুল্যে আগামী তিন মাসের খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে এবং নুন্যতম একমাসের খাদ্যসামগ্রী ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিয়ে সারাদেশে লকডাউন কার্যকর করতে হবে।
চার. গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য স্থায়ী রেশনিং ব্যাবস্থা চালু করতে হবে।