
বৈশ্বিক মহামারি সংক্রামক রোগ করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) লক্ষণগুলোর তালিকায় নতুন শনাক্ত করা আরও ৬টি লক্ষণ যুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। কোভিড-১৯ এর এসব নতুন লক্ষণগুলো সিডিসি তাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করেছে। খবর এনডিটিভি।
ওয়েবসাইটে সিডিসি বলেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্তরা মৃদু লক্ষণ থেকে গুরুতর অসুস্থতার বিভিন্ন লক্ষণের কথা জানিয়েছে। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
সংস্থাটি নতুন যেসব লক্ষণের কথা জানিয়েছে সেগুলো হল, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, বারবার কাঁপুনি, পেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং হঠাৎ করে স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া।
সিডিসি তাদের উল্লেখ করা লক্ষণগুলোই সব নয় জানিয়ে তীব্র ও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অন্যান্য লক্ষণ দেখা গেলে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছে।
এসব লক্ষণের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রশ্ন-উত্তর ওয়েবপেইজে উল্লেখ নেই বলেও জানিয়েছে এনডিটিভি।
ডব্লিউএইচও এর ওয়েবপেইজে কোভিড-১৯ এর উল্লেখ করা লক্ষণগুলো হল, জ্বর, শুকনো কাশি, ক্লান্তি, টানা অস্বস্তিকর বেদনা ও ব্যাথা, সর্দি, গলা ব্যাথা এবং ডায়রিয়া।
সিডিসি ও ডব্লিউএইচও, দুটি ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা কমন লক্ষণগুলো হল জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট।
উল্লেখ্য, চীনের উহান থেকে গত ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব। এরপর চার মাসে এ ভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। ভাইরাস মোকাবিলায় দেশে দেশে চলছে লকডাউন, জরুরি অবস্থাসহ নানা পদক্ষেপ। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ আর মারা গেছে ২ লাখের বেশি মানুষ। আর সুস্থ হয়েছে ৯ লাখেরও বেশি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৫৮৮ জন। সুস্থ হয়েছে ৯ লাখ ২৩ হাজার ৪৬ জন। বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৫৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৫৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বে ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৫২ জন শনাক্ত রোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৫৬ হাজার ৩০৫ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১০ লাখ ১০ হাজার ৫০৭, মারা গেছে ৫৬ হাজার ৮০৩ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। পুরো বিশ্বে মারা যাওয়া মানুষের এক-চতুর্থাংশ এবং আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়া স্পেনে আক্রান্ত ২ লাখ ২৯ হাজার ৪২২, মারা গেছে ২৩ হাজার ৫২১ জন। ইতালিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৪, মারা গেছে ২৬ হাজার ৯৭৭ জন। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪২, মারা গেছে ২৩ হাজার ২৯৩ জন। জার্মানিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৮, মারা গেছে ৬ হাজার ১২৬ জন। ইংল্যান্ডে আক্রান্ত ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৯, মারা গেছে ২১ হাজার ৯২ জন। তুরস্কে আক্রান্ত ১ লাখ ১২ হাজার ২৬১, মারা গেছে ২ হাজার ৯০০ জন। ইরানে আক্রান্ত ৯১ হাজার ৪৭২, মারা গেছে ৫ হাজার ৮০৬ জন।
করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্ত ৮২ হাজার ৮৩৬, মারা গেছে ৪ হাজার ৬৩৩ জন। ব্রাজিলে আক্রান্ত ৬৭ হাজার ৪৪৬, মারা গেছে ৪ হাজার ৬০৩ জন। কানাডাতে আক্রান্ত ৪৮ হাজার ৫০০, মারা গেছে ২ হাজার ৭০৭ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৪৬ হাজার ৬৮৭, মারা গেছে ৭ হাজার ২০৭ জন। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ৩৮ হাজার ২৪৫, মারা গেছে ৪ হাজার ৫১৫ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ২৯ হাজার ১৬৪, মারা গেছে ১ হাজার ৬৬৫ জন। আয়ারল্যান্ডে আক্রান্ত ১৯ হাজার ৬৪৮, মারা গেছে ১ হাজার ১০২ জন। সুইডেনে আক্রান্ত ১৮ হাজার ৯২৬, মারা গেছে ২ হাজার ২৭৪ জন। মেক্সিকোতে আক্রান্ত ১৫ হাজার ৫২৯, মারা গেছে ১ হাজার ৪৩৪ জন।
ভারতে আক্রান্ত ২৯ হাজার ৪৫১, মারা গেছে ৯৩৯ জন। পাকিস্তানে আক্রান্ত ১৪ হাজার ৭৯, মারা গেছে ৩০১ জন। বাংলাদেশে আক্রান্ত ৫ হাজার ৯১৩, মারা গেছে ১৫২ জন।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি, এর কারণে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিও কাজ না করতে পারে তাই এগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।