File Image
পিয়ংইয়ং: হার্ট সার্জারির পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে চীন সমর্থিত হংকং স্যাটেলাইট টিভি (এইচকেএসটিভি)।
চ্যানেলটির একজন উপ-পরিচালক গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল) এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে হংকং ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক এই খবর ‘ভুয়া’ বলে জানিয়েছে।
হংকং স্যাটেলাইট টিভির উপ-পরিচালক এই খবরের পেছনে ‘খুব নিশ্চিত সূত্রের’ বরাত দেন। তার এমন পোস্ট চীনের জনপ্রিয় বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ উইবোতে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে জাপানের এক সংবাদমাধ্যম বলছে, কিম জং উন মারা যাননি, তিনি এখন অচেতন অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে আরও কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, উত্তর কোরিয় নেতার মৃত্যুর খবর প্রচার হচ্ছে অসমর্থিত সূত্রের বরাতে। আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যম এখনো তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ অনেক সংবাদমাধ্যম কিমের আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর প্রচার করেছে। এদিকে নিউইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিমের মৃত্যুর বিষয়টি গুজব।
কয়েকদিন ধরেই উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের স্বাস্থ্যগত সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে, সে বিষয়ের কোনো সুরাহা হয়নি এখনো। এর মধ্যেই কিম জং উনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে টিভি চ্যানেলটি।
যদিও এ ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দেয়নি। কোনো বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ তথ্য নেই বহুল প্রচারিত ও প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও।
দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি এনকে গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গত ১২ এপ্রিল কার্ডিওভাসকুলারের অস্ত্রোপচার করেছেন বলে খবর দেয়। উত্তর কোরিয়ার অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে কিমের অসুস্থতার এই খবর দেয় ডেইলি এনকে। তবে পরে অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিমের আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর প্রকাশ পায়।
এর আগে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জন উনকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে দেশটিতে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পাঠিয়েছে চীন। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক সদস্যের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞটি দলটি বৃহস্পতিবার দেশ ছেড়েছে।
এছাড়া আরও গুজব রয়েছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিম জং উনের মৃত্যু হয়েছে। কিছু অসমর্থিত সূত্র বলছে, তিনি হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তারপর কিমের মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কোন ধরনের অসুস্থতায় কিমের মৃত্যু হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেনি হংকং স্যাটেলাইট টিভির ওই উপপরিচালক।
তবে সত্যিই যদি কিমের মৃত্যু হয়ে থাকে, তাহলে সারা পৃথিবী থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ায় তার উত্তরাধিকারী কে হতে যাচ্ছেন? বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এমন প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সেজং ইনস্টিটিউটের রাজনৈতিক বিশ্লেষক চেওং শেওং চ্যাং জানিয়েছেন – কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং-এর ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে সর্বোচ্চ নেতার আসনে বসবার।
এর কারণ হিসেবে ওই বিশ্লেষক বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারিবারিক রাজতন্ত্রে কিম ইয়ো জংকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে মানা হয়। তার রয়েছে রাজরক্ত। ইতোমধ্যেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কিম জং উন তার বোনকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন।
তবে, ২০১৭ সালে প্রকশিত ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল- পুরুষতান্ত্রিক নেতৃত্বের ধারায় উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা হওয়া কিম ইয়ো জং এর পক্ষে একটু কষ্টসাধ্যই হবে।
এর বাইরে, কিম জং উনের একজন সৎ ভাই ছিলেন কিম জং নাম। ২০১৭ সালেই তাকে ম্যাকাওতে হত্যা করা হয়। কিম জং উন তাকে নিজের জন্য হুমকি মনে করতেন। তাই বারবার প্রাণভিক্ষার আবেদন করেও নামের কোনো লাভ হয়নি, খুন হতে হয়েছে।
কিম জং উনের রয়েছে আরেকজন আপন বড় ভাই, নাম কিম জং ছল। কিন্তু রাজনীতির ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ না থাকায় এবং কিছুটা মেয়েলি স্বভাবের হওয়ার কারণে তিনি আলোচনার বাইরেই থেকে গেছেন। কিম জং ছল একজন প্রতিভাবান গিটারবাদক, বছর পাঁচেক আগে তাকে বিশ্বনন্দিত শিল্পী এরিক ক্লাপ্টনের সঙ্গে একই শোতে বাজাতে দেখা গিয়েছিল। তবে নেতৃত্বের সংকটে তিনিও সামনে চলে আসতে পারেন।
এছাড়া কিম জং উনের দুই চাচা কিম পিয়ং এবং জাং সং তাহেককেও আলোচনার বাইরে রাখাটা বোকামি হবে। তাদের প্রথমজন অনেকদিন পর গত নভেম্বরে উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন। তার বয়স ৬৫ বছর। আর দ্বিতীয়জন উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলে কিম জং উন তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করেন।
প্রসঙ্গত, পর পর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় আয়োজনে কিম জং উন জনসম্মুখে না আসায়, তার অসুস্থ্যতাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন খবর তৈরি হয় এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সারা দুনিয়া থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খবরগুলোর সত্যতা যাচাই করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। তারমধ্যেই, হংকং থেকে আসলো কিম জং উনের মৃত্যুর খবর।