
আওয়ামী লীগ নিজে থেকে সরে না গেলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে। এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না জনগণ বলেছেন, গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।
আজ শনিবার দুপুরে সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যালয়ে সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২ বছরের কারাবাসের প্রতিবাদে এই সভা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক হোসেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, জেএসডির শাহ আকম আনিসুর রহমান খান, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, শাহ আহমেদ বাদল, গণ দলের গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ।
ড. কামাল বলেন, ‘এখন আমি মনে করি যে, এই ধরনের সভা নয়। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামবো এবং এটা অর্জনে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে আমরা চলুন সবাই ভূমিকা রাখি। যারা ক্ষমতা আত্মসাৎ করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করি। আসুন আর এক মিনিটও দেরি না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের ক্ষমতা আমরা উদ্ধার করি। শহর-জেলায় আমাদেরকে যেতে হবে, বলতে হবে- রুখে দাঁড়ান। দেশটা আমাদের সকলেরই, দেশের ক্ষমতা যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করি।’
তিনি বলেন, জনগণ দেশের মালিক, মালিক হিসেবে তাদের যেন শ্রদ্ধা করা হয়, মালিক হিসেবে তারা যেন ভূমিকা রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা যাতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠন করতে হবে, সেই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাদের হবে তারা সরকার পরিচালনা করবে। এদের (ক্ষমতাসীনদের) বলে তো কোনো লাভ নেই, এদের লাথি মেরে বের করে দেয়া দরকার। পদত্যাগ পদত্যাগ না বলে ….।’
পদত্যাগ না করলে কী করতে হবে প্রশ্ন করলে সভায় উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা বলেন, ‘লাথি মেরে বের করতে হবে’।
তখন ড. কামাল বলেন, ‘গুড। ওইসব ভাষা না বলে তাদেরকে অন্তত হাত ধরে টেনে রাস্তায় নামিয়ে দিতে হবে আর কী।’
কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য এখানে সভা করতে হবে, দাবি করতে হবে-এটা অকল্পনীয়। ৪৮ বছর দেশ স্বাধীন হয়েছে এখনো রাজবন্দির মুক্তির কথা বলতে হবে-এটা দুঃখের বিষয়। আসুন এখন আর সভা নয়, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামি।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা সবসময় দেখেছি বাংলাদেশের জনগণকে বঞ্চিত করে এখানে স্বৈরতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ কেউ দিতে পারেনি। চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে।
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘এখানে যারা কথা বলেছেন, সবাই একমত দেশ জনগণের মালিকানায় ফিরে আসতে হবে। ৪৮ বছর হয়ে গেছে-এখন স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। এই সময়ে লজ্জার ব্যাপার হবে দেশের জনগণ ক্ষমতাচ্যুত থাকে, যেখানে সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে মানুষকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে- এটা আমরা মেনে নেই। এটা মেনে নেয়া যায় না। মালিককে মালিকানা হিসেবে আমাদের ১৬ কোটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবে-এটা একটা প্রহসন। অর্থাৎ যারা প্রহসন করে এসেছে তাদের এখন সময় এসেছে সহজ ভাষায় বলা, সরে দাঁড়াও, সরে দাঁড়াও, সরে দাঁড়ান।’
ড. কামাল অভিযোগ করে বলেন, ‘তোমরা যেভাবে ক্ষমতা আত্মসাত করে জনগণকে বঞ্চিত করে স্বৈরতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছো এবং যেভাবে দুর্নীতি, যেভাবে কুশাসন, যেভাবে মানুষের বিরুদ্ধে অত্যাচার চলছে, যেভাবে লক্ষ লক্ষ মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে –এটা মানুষ আর মেনে নেবে না। কথা হলো যে, তোমরা সরে দাঁড়াও। না হলে স্বাধীনতার প্রতি, মানুষের প্রতি অসম্মান জানানো হচ্ছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য জীবন দিয়েছিলো তাদের প্রতি অসম্মান জানানো হচ্ছে। তোমাদের যারা ক্ষমতা জবর-দখল করে রেখেছো সেখান থেকে সরে আসতে হবে।’