
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণ হিঙ্গাজিয়ার মনছুব মিয়া (৪২) মধ্যপ্রাচ্যর কাতারে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। পরে ডান পায়ের গোড়ালিতে অস্ত্রোপচার করে পাত বসিয়ে দিয়েছিলেন সে দেশের চিকিৎসকরা। পাঁচ মাস পর দেশে ফিরে সেই পাত খুলতে সিলেটের অর্থোপেডিক্স সার্জন ডা. সুমন মল্লিকের কাছে যান তিনি। ডাক্তারের পরামর্শে তাকে নগরীর মিরবক্সটুলাস্থ ‘সিলেট ট্রমা সেন্টারে’ ভর্তি করা হয়।
মনছুব মিয়ার ভাতিজা মোজাহিদ আহমদ জানান, অস্ত্রোপচারের আগে ডা. সুমন মল্লিক কয়েকটি পরীক্ষা করান। পরীক্ষা করেই তিনি এরকম অস্ত্রোপচার খুবই সাধারণ বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। অস্ত্রোপচার করে পা থেকে পাত অপারেশনের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে ৩২ হাজার টাকার চুক্তিও হয়। রাত দেড়টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় মনছুব মিয়াকে। প্রায় আধাঘণ্টা পর ট্রমা সেন্টারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডা. সুমন মল্লিকের বরাত দিয়ে রোগীর স্বজনদের জানান, অপারেশন ‘সাকসেসফুল’ হয়েছে।
এ সময় তাদের ২০ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। বাকি টাকা রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় দিতে হবে। কথা মতো স্বজনরা ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এর কিছুক্ষণ পর ডা. সুমন মল্লিক অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে জানান, অপারেশন ‘সাকসেস’ হয়নি। পাতের মধ্যে যে স্ক্রু মারা সেটা খোলার মতো কোন যন্ত্রপাতি তার কাছে নেই। এমনকি এই পাত বাংলাদেশের কোন ডাক্তারই খুলতে পারবে না বলেও জানান তিনি। পাত খোলার জন্য রোগীকে কাতার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এরপর জমাকৃত ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৮ হাজার টাকা রোগীর স্বজনদের ফেরত দেবার নির্দেশ দিয়ে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন এই সার্জন।
চিকিৎসকের কাছ থেকে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা। ট্রমা সেন্টার কর্তৃপক্ষও ২০ হাজারের মধ্যে ৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে রোগীকে বাড়িতে নিয়ে যেতে স্বজনদের চাপ দেন। প্রথমে রেগীর স্বজনদের ৮ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ১২ হাজার টাকা সর্ভিস চার্জ বলে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তোপের মুখে পুরো টাকা ফেরত দেয় কর্তৃপক্ষ।
ডা. সুমন মল্লিক এমন ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘সব অপারেশন সাকসেসফুল হয় না। যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। অর্ধেক অপারেশনের পর দেখা যায় মনছুর মিয়ার পায়ে যে পাত লাগালো সেটি খোলার মতো ইকুপমেন্ট নেই।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই হাসপাতালের কোনো অনুমোদনই নেই। নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা সার্জন থাকার কথা থাকলেও সেটিও নেই হাসপাতালে। শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই চলছে কার্যক্রম।
হাসপাতালটির সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানান, আমাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে, হাসপাতালের অনুমোদনের জন্য সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (স্বাস্থ্য) দেবপদ রায় জানান, ‘আমরা অচিরেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করব। কোনো অবস্থাতেই অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো যাবে না।’