বাংলাদেশে ঢাকার কুর্মিটোলায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতারের পরদিন বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের পুলিশী রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
তবে গ্রেফতারকৃত এই ব্যক্তিকে নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রকৃত দোষীকেআটক করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। খবর বিবিসি বাংলার
বিশ্লেষকরা বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে, সেকারণে এখন আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতারের পরই তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্য থেকে এই ইস্যুতেও বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।
কিন্তু কেন এই বিতর্ক
দেশ জুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে র্যাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ ছাত্রীকে ধর্ষণের তিন দিনের মধ্যে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করেছে।
র্যাবের কর্মকর্তারা বলেছেন, ধর্ষণের শিকার সেই ছাত্রীকে ছবি দেখিয়ে গ্রেফতারকৃত এই ব্যক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন।
এরপরও এনিয়ে বিতর্ক চলছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে নিয়ে।
যারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন একজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটিকে উদ্ধৃত করে অভিযুক্ত সম্পর্কে অনেক বর্ননা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল, তার সাথে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে মিলাতে গিয়ে তার সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, অতীতে বিভিন্ন মামলায় আসল মানুষকে না ধরে অন্য ব্যক্তিকে গ্রেফতারের অনেক উদাহরণ আছে। সেকারণেও এখন গ্রেফতারকৃতকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলে তিনি মনে করেন।
সন্দেহ প্রকাশকারী এই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আগে দেখেছি, অভিযুক্ত না হয়েও জাহালম নামের একজন ব্যক্তি একটি মামলায় ১০ বছর কারাগারে ছিলেন।এরকম উদাহরণগুলোতো আছে। আর নিজেদের চোখের সামনেও আসল অভিযুক্তকে বাদ দিয়ে অন্যকে গ্রেফতারের অনেক ঘটনা ঘটেছে। পলে পুলিশের এপর আমরা ভরসাটা করি কিভাবে?
তিনি আরও বলেন, মেয়েটির যে বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, সেখানে দাম্ভিক ব্যক্তির কথা এসেছে।তাতো মিলছে না। এখানেই সন্দেহ হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম হাসপাতালে ক্ষতিগ্রস্ত সেই মেয়েটির সাথে কথা বলেছিলেন। তিনি বলছিলেন, রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিভিন্ন কারণে এই বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তার মনে হয়েছে।
যেটা আমরা দেখেছি, আসল দোষীকে গ্রেফতার করা হয় না অনেক ক্ষেত্রে। সে সব মামলায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। সকল ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারটি হবে, তা কিন্তু নয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে বলবো, যখন কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, আমরা অনেক সময় ধরে নেই, যে ব্যক্তিটি করেছে, সে সুঠাম দেহী হবে। সে স্বাস্থ্যবান বা অনেক উঁচা লম্বা হবে।
তিনি আরও বলেছেন, বিভিন্ন এজেন্সী কিন্তু মেয়েটিকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং সে বর্ননা করেছে। সেই বর্ননার সাথে এই গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মিলে গেছে।
আস্থার অভাব
মানবাধিকার কর্মিদের অনেকে এমন বিতর্কের ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রতি আস্থার অভাবকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন।
তারা বলেছেন, অতীতে আসল অভিযুক্ত ধরা না পড়ার অনেক ঘটনা উদাহারণ হয়ে আছে। সেকারণে সংকট বেড়েই চলেছে।
তবে বিষয়টাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন পুলিশের সাবেক একজন আইজি নুরুল হুদা।
তিনি বলছিলেন, ধর্ষণের মামলায় অল্প সময়ের মধ্যে আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ঘটনা হাতেগোনা এবং সেটিই এখন সন্দেহ সৃষ্টি করছে বলে তিনি মনে করেন।
পুলিশ দেখছে বিতর্কের উদ্দেশ্য
এই বিতর্ক সৃষ্টির পিছনেই কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেছেন, এখন গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজনকে নিয়ে বিতর্ক করার কোনো সুযোগ না থাকলেও তা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করার কোনো অবকাশ নাই।কারণ আমরা ঘটনাস্থলটাকে যেভাবে দেখেছি। ভিক্টিমের যে বক্তব্য শুনেছি।এবং তার একটি ফোন পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই ফোনের সূত্র ধরে এবং আমরা কিছু ম্যানুয়েল সোর্স কাজে লাগিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী আসামীকে ধরেছে।সেই আসামীকে ভিক্টিস শণাক্ত করেছে।
তিনি আরও বলেছেন, যারা এসব বিতর্ক তুলছেন বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে, এই সামাজিক মাধ্যম যারা ব্যবহার করছেন তারা ঘটনাস্থলের আশে পাশে নাই। আমি বলবো, তারা সরকারকে বিব্রত করতে চান। পুলিশকে বিব্রত করলে সরকারকে বিব্রত করা হবে, হয়তো কেউ কেউ এই মনমানসিকতা নিয়ে এ ধরণের বিতর্ক তুলছেন।
পুলিশের কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির ডিএনএ টেস্টসহ ফরেনেসিক কিছু বিষয়ে আরও পরীক্ষা করার পর তারা মামলাটিতে চার্জশিট দেবেন।