
নিরীক্ষা আপত্তির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বিষয়ে সরকারের রাজস্ব বকেয়া পাওনার সালিশের জন্য গ্রামীণফোন সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “জিপি সিঙ্গাপুরের একটি ল ফার্মের মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিস দিয়েছে আর্বিট্রেশনে যাওয়ার জন্য। আমি মনে করি যে এটি খুব দুঃখজনক।
বাংলাদেশে ব্যবসা করবে একটি প্রতিষ্ঠান, সেই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিস দিয়ে আর্বিট্রেশনের জন্য চাপ দেবে, এটা বোধহয় খুব সহজে গ্রহণ করার মত অবস্থা না।”
নোটিশের বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কী না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবহিত করা রয়েছে। সবাই বিষয়টা জানেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এ উকিল নোটিশ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এর কারণটা হচ্ছে তারা যে জায়গায় চাচ্ছে সে জায়গাটা হচ্ছে আরবিট্রেশন যেন করা হয়। আরবিট্রেশন করার জায়গায় আমরা উম্মুক্ত রয়েছি। বাংলাদেশের আদালতে মামলা করে বসে থাকে, আদালতের বাইরে আরবিট্রেশন করার সুযোগ নাই।
‘আদালত যদি হুকুম দেয় আরবিট্রেশন করার তাহলে করতে পারবো। যে দেশে বিজনেস করে সে দেশের আইন-আদালত অমান্য করে দুনিয়ার কোনো জায়গায় গিয়ে অন্য বিচার পাওয়ার সম্ভবনা নাই। আমরা সঠিক পথে রয়েছি, আদালত তার দৃষ্টিভঙ্গি চমৎকারভাবে করেছে।’
গ্রামীণফোন আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কোনো উদ্যেগ নিচ্ছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, তারা এরকম একটি ধারণা দিয়েছে যদি আরবিট্রেশন না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবেই। তবে আমার যেটা অবজারভেশন, বাংলাদেশের আদালতে হেরে গিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে কিছু একটা করা যাবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। দিনের শেষে অংকটা সহজ, ব্যবসাটা বাংলাদেশেই করতে হবে, বাংলাদেশের আইন কানুন না মেনে আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা করে দেবে না।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমরা সহানুভুতিশীল, আলোচায় বসতে ইচ্ছুক, আমরা সমস্যার সমাধানের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর মধ্যে থেকে কেউ জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন করে আমরা সেটি আর করতে পারি না।
গ্রামীণফোনের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা মেনে চলা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রবি ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে মামলা তুলে নিতে চায়। আমরা তো মামলায় যাইনি, ওরা যদি মামলো তুলে নিলে আলোচনায় বসে তাহলে কোনো আপত্তি নেই। তবে মামলা চলাকালীন অবস্থায় আলোচনা করতে পারি না কারণ সেটি আদালত অবমাননা হয়ে যাবে। তবে জিপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারবো না, যতক্ষণ আদালতের রায় তারা না মানে।
এ বিষয়ে জানতে গ্রামীণফোনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও বক্তব্য জানতে পারেনি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা চেয়ে গত এপ্রিল মাসে চিঠি দিয়েছিল টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। তাতে কাজ না হওয়ায় আরোপ করা হয় কড়াকড়ি।
গ্রামীণফোনের পাশাপাশি ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনার দাবিতে আরেক অপারেটর রবির ক্ষেত্রেও বিটিআরসি একই পদক্ষেপ নেয়। বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতে হয়।
মীমাংসার উদ্যোগে নিয়ে অর্থমন্ত্রী গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দফা বৈঠক করলেও তাতে সমাধান আসেনি। বিটিআরসির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার নিরীক্ষা দাবির নোটিসের ওপর হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে গত ২৪ নভেম্বর গ্রামীণফোনকে অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রবির নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারধীন।