
সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বা অতুলনীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে চার্লি চ্যাপলিনের (১৮৮৯-১৯৭৭) নামটাও দশ জনের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে। চলচ্চিত্রের একশো বছর পার হয়েছে ১৯৯৫ খিস্টাব্দে। নাটক, উপন্যাস ও গল্প এবং চলচ্চিত্র তিনটির মধ্যে কনিষ্ঠ চলচ্চিত্র, কিন্তু জনপ্রিয়তায় তার তুলনা বিরল। তবে ১৯৯৫ পরবর্তীকাল থেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে দূরদর্শন এবং শপিংমল সংলগ্ন ছোট হলঘরের নির্বাচিত দর্শকদের সিনেমা।
বিশ শতকের নির্বাক এবং সবাক যুগের সেরা চলচ্চিত্রকার অভিনেতা, পরিচালক, স্ক্রিন রাইটার, সম্পাদক, কাহিনীকার, গীতকার এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন চার্লি চ্যাপলিন। চার্লি চ্যাপলিন, যাঁকে সম্মানিত করেছে ‘ডক্টর অব লেটার্স’ মর্যাদায় অকসকোড এবং ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়। চ্যাপলিন জন্মেছিলেন ১৬ এপ্রিল ১৮৮৯-এ এবং প্রয়াণ ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭-এ প্রায় ৮৮ বছর বয়সে। তাঁর যাবতীয় কজকর্মের মধ্যে আছে গান, নাটক, চলচ্চিত্র ছাড়াও কবিতা লেখা, গল্প লেখা, প্রবন্ধ চর্চা, বক্তৃতা ছাড়াও নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড।
পাঁচ-সাত বছর বয়সেই তাঁর গায়িকা মা একদিন গান গাইতে গাইতে কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দর্শক ও শ্রোতারা বিরক্ত হয়ে উঠলেন। সেই থিয়েটার মঞ্চের ম্যানেজার শিশু চার্লিকে নামিয়ে দিলেন গান গাইতে। চার্লির অভিনয় সহ গান শুনে মুগ্ধ হলেন শ্রোতারা। শৈশবকাল কেটেছে দারিদ্রে, মা-বাবার ঝগড়া শুনে। জীবনের প্রথম পর্বে ইংল্যান্ডের ভ্রাম্যমাণ নাটকের দলে কাজ করেছেন। ‘ফুটবল ম্যাচ’ নাটকে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শদের মুগ্ধ করেন।
সিনেমায় প্রবেশ এবং আমেরিকায় কিস্টোন ফিল্ম কোম্পানিতে যোগদান তাঁর জীবনের পালাবদল ঘটায়। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে ‘মেকিং এ লেডিস’ (একরিল) তাঁর প্রথম অভিনয় চলচ্চিত্র, কিন্তু গোলাকার টুপি, ঢোলা ট্র্যাউজার, টাইট জ্যাকেট, আর বেঢপ জুতো নিয়ে ভবঘুরে চার্লির আবির্ভাব ‘কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস’ চলচ্চিত্র। তারপর আর পেছনে নয়, সামনে এগিয়ে চলা। চার্লি চ্যাপলিন হয়ে উঠেছেন ‘ভবঘুরে মিলিয়োনেয়ার’। ১৯১৬ সাল থেকেই বিশ্বজোড়া পরিচিতি। আমেরিকা, ইউরোপ শুধু নয়, গোটা পৃথিবী জুড়ে। ভাবতবর্ষেও তাঁর জনপ্রিয়তা কম ছিল না। নির্বাক চলচ্চিত্র বলেই পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষের কাছে চলচ্চিত্রের আবেদন সহজেই পৌঁছে যায়।
১৯১৪-১৯৬৭ পর্যন্ত ৮১টি ছোটবড় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। শেষ ছবি মার্লন ব্রান্ডো আর সোফিয়া লরেন অভিনীত ‘এ কাউন্টেন ফ্রম হংকং’। চ্যাপলিন জাহাজের স্টুয়াটের ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। সাধ ছিল কিন্তু সাধ্য ছিল না। কন্যা ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে ‘দ্যা ফিক’ নামে ডানাওয়ালা এক বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করে চলে গেছেন অন্যত্র। শেষ জীবনের কয়েক বছর কেটেছে অসুস্থতায়। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭ চ্যাপলিন ঘুমের মধ্যেই চিরতরে বিদায় নেন। সূত্র- কলকাতা২৪x৭।