
নিউজ ডেস্ক
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বেশ কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলার সামগ্রী ও মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সবগুলোই মতিঝিলের বেশ সুপরিচিত ক্লাব। ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের সাথে আছে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব।
গত বুধবার রাতে ঢাকায় একের পর এক অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে চলা চারটি ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয়।
তবে দেশের ক্লাবগুলো মূলত স্পন্সর আর ডোনারদের থেকে অর্থ নিয়ে ক্লাব চালায়, বিবিসি বাংলার কাছে বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবগুলোর কর্তারা এমনটাই দাবি করেছেন।
গত এক দশকে বাংলাদেশে ঘরোয়া ফুটবলে যেসব ক্লাব বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে তাদের মধ্যে একটি বসুন্ধরা কিংস।
বিদেশী কোচ, ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার ও অবকাঠামোর উন্নয়ন দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সাড়ির একটি ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এখন বসুন্ধরা কিংস।
এই ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসান, বিবিসি বাংলা তার কাছে জানতে চায় বসুন্ধরা কিংসের আয়ের উৎস কী?
তিনি বলেন, মূলত পৃষ্ঠপোষকদের দেয়া অর্থ ও ডোনেশন দিয়েই আমরা ক্লাব চালায়। তবে এভাবে ক্লাব চালানো কষ্টসাধ্য বলেও মানেন তিনি।
বাংলাদেশের যে আর্থ সামাজিক অবস্থান এখানে স্পোর্টস ক্লাব থেকে লাভ আসার কথা কেউ ভাবে না।
লাভ হবে কি না সেটা অকল্পনীয় একটা ব্যাপার, মাঝেমধ্যে কষ্ঠসাধ্য হয়ে যায়, স্পন্সর জোগাড় করি, নিজস্ব অর্থ আছে, বাংলাদেশের ফুটবল পিছিয়ে পড়েছে, মালিকপক্ষ খেলার প্রতি ভালোবাসা থেকে এটা করছে।
বাংলাদেশের আরেকটি ক্লাব শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, যারা ২০১০ থেকে বেশ বড় মাপের দল তৈরি করে আসছে। যে দল প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের পেশাদার প্রতিযোগিতা গুলোতে অংশ নিয়ে শিরোপার জন্য লড়াই করে।
এই ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু।
তিনি সরাসরিই বলেন, ক্যাসিনোর যে কথা উঠেছে সেটার কোনো ভাগই ক্রীড়ায় বিনিয়োগ হয়না, এই ভাগ কারা তুলে নিয়ে যায় সেটা বলাই বাহুল্য।
ফুটবল বলেন, ক্রিকেট বলেন, সুইমিং বলেন কোনো খেলাতেই ক্যাসিনো থেকে অর্থ আসে না।
আমরা যখন খেলতাম তখনও নিবেদিত কিছু কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের চাঁদা বলেন বা ডোনেশন তা দিয়েই ক্লাব চলতো, গত চার-পাচঁ বছরে এই সিস্টেম বদলালেও, ক্যাসিনো থেকে কখনোই বেনিফিট পায়নি ফুটবল।
চুন্নু আরো বলেন, আসলে আমরা এখন নাম কেনার প্রতি মনোযোগী এভাবে ফুটবল এগোবে না, এভাবেই পুরো জীবন চলে যাবে। ফুটবলের পেছনে কিন্তু পুরো পৃথিবীতেই প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, সেই তুলনায় বাংলাদেশ নগণ্য ব্যয় হয়।
আমরা যদি প্রফেশনাল ফুটবলে এশিয়াতেও ভালো জায়গায় থাকতাম, তাহলে টাকা ঢালতো অনেকে, ফুটবল খেলায় যে বিনিয়োগ হয় সেটা যথার্থ বলে আমি মনে করি না।
সনৎ বাবলা বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনের একজন সিনিয়র সাংবাদিক, তিনি বাংলাদেশের ফুটবল সংস্কৃতির একটি রুপরেখা বিবিসি বাংলার কাছে তুলে ধরেন।
দেশের ফুটবল ক্লাবগুলো লাভ-ক্ষতির বিচার করে ফুটবল চালায় না, কারণ তারা আয় করে এই টাকা খরচ করে না, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বড় ক্লাবগুলোকে টাকা দেয়, বড় বড় ব্যবসায়ীরা যারা কমিটিতে থাকেন তারা ডোনেশনের টাকা দেন, এটা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ফেনোমেনা, এটা ইউরোপীয়ান ফুটবলের সাথে মেলানো যাবে না।
বর্তমানে চলমান ক্যাসিনো নিয়ে ওঠা প্রশ্নের উত্তর দেন সনৎ বাবলা একটি উদাহরণ দিয়ে।
প্রথমদিন যে ক্লাবে অভিযান চালানো হয়েছে ইয়াংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাব, সেই ক্লাবেই অনেক বড় ব্যবসা হতো, দুই বছর আগে তারা চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হয়েছিল, কিন্তু টাকার অভাবের কথা বলে তারা প্রিমিয়ার লিগে খেলেনি, অর্থাৎ ক্যাসিনো থেকে আয় করলেও সেটা ক্লাবে থাকে না।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান নিয়েও বাবলা বলেন, মোহামেডান ক্লাবের ক্যাসিনোর বয়স এক বছরও হয়নি, এই ক্লাবটি দিনের পর দিন অধঃপতনে যাচ্ছে।