
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার জামিন দিলেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিতে বাধা আরও দুই মামলা। আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে আরও ২ মামলায় জামিন নিতে হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, যে দুটি মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেলেন, তা জামিনযোগ্যই ছিল। নিু আদালত জামিন না দেয়ায় হাইকোর্টে এসেছিলাম।
হাইকোর্ট দুই মামলায় ৬ মাস করে জামিন দিয়েছেন। তবে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন না পাওয়ায় এখনই তার মুক্তি মিলছে না। মওদুদ বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল মামলায়ও জামিন আবেদন করা হয়েছে। ওই মামলার নথি আসতে আর ১২ দিন বাকি আছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ে ওই মামলায় তার জামিন শুনানি হবে।
দুদকের জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা ৫টি- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। এ ৫টি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের (১/১১)। অন্য ৩১টি মামলা ২০১৪ সালের পর হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি ঢাকায়, কুমিল্লায় ৩টি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি।
মূলত রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণখেলাপির অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে।
পুলিশ, সরকারি দলের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলার বাদী। বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার কারাবাসের ১৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের সাজা হয়েছে তার। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাইকোর্টের ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া ৭ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
সম্পত্তি জব্দের আদেশে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেন আদালত। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে থাকা ওই মামলার নথিপত্র দুই মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতে পাঠাতে বলা হয়।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটিও নথিভুক্ত করা হয়েছে। শুনানিকালে আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, অন্য একটি মামলায় বিচারিক আদালতের সাজা উচ্চ আদালতে বেড়েছে।
ওই মামলায় জামিন না হলে তিনি মুক্তি পাবেন না। বিষয়টি জরুরি দেখছি না। তাই নথি আসুক, তখন জামিনের আবেদনটি দেখা হবে। জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে আরও ২ মামলায় জামিন নিতে হবে। জামিন আবেদন করা হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, অন্য ১০টি মামলার মতোই জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনের বিরোধিতা করা হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলে ছাড় দেয়া হবে না।
মানহানির দুই মামলায় জামিন : ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শুভ বিজয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। আসলে দলটি ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী। ওই বক্তব্যের জেরে তার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী।
অন্যদিকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এবি সিদ্দিকী আরেকটি মামলা করেন।
দুটি মামলায়ই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত। ওই দুই মামলায়ই হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। ২২ মে শুনানির জন্য ১৭ জুন দিন ধার্য করেন।
ওইদিন শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদেশের জন্য ধার্য ছিল। দুই মামলায় তাকে ৬ মাস করে জামিন দেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফজলুর রহমান খান।
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার চার্জ শুনানি ১৫ জুলাই : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ১৫ জুলাই। অসুস্থ থাকায় মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। ফলে সময় আবেদন করা হয়। কেরানীগঞ্জের কারা ভবনে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন সময় আবেদন মঞ্জুর করে চার্জ শুনানির দিন ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড কোম্পানিকে (গ্যাটকো) পাইয়ে দেয়া হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৩ মে তদন্ত শেষে দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদা খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ৭ জন মারা যাওয়ায় এখন আসামি সংখ্যা ১৭ জন।