
আব্দুস সালাম শাহীন-শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়ার শেরপুরে কালবৈশাখি ঝড়ে উপড়ে পড়া সামাজিক বনায়ণ ও নার্সারী এবং সরকারি রাস্তার গাছ লোপাট হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উদাসীনতায় ঝড়ের পরে বিকেল থেকে সারা রাত ব্যাপী গাছ ও গাছের ডালপালাগুলো লুটপাট হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সচেতন এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় বন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই এসব গাছ ও গাছের ডালপালা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৭ মে বিকেলে বগুড়া জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখি ঝড়। প্রায় ২০-২৫ মিনিটের এই ঝড়ে শেরপুর উপজেলার সরকারের সড়ক, মহাসড়ক ছাড়াও সরকারী বন বিভাগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি মালিকাধীন হাজার-হাজার ছোট বড় গাছ ভেঙ্গে পড়ে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শেরুয়ায় অবস্থিত বন বিভাগের সামাজিক বনায়ণ ও নার্সারীর (ফরেষ্ট বাগান) প্রায় শত বছরের অনেক পুরাতন গাছ উপড়েপড়া সহ তার ডালপালা ভেঙ্গে যায়। ঝড়ের পর পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় রাতের অন্ধকারেই ছোট এবং মাঝারি ধরনের বেশ কিছু গাছ ও গাছের ডালপালা উধাও হয়ে যায়। এভাবে সরকারী বনের ডালপালা লুটপাট হলেও ঝড় পরবর্তী সময়ে বন কর্মকর্তার দেখা মেলেনি ওই সব এলাকায়। কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে এসে বাধাঁ দিলেও তাদের কথায় কেউ কোন কর্ণপাত করেনি। ফলে রাতের আধারেই চলে গাছ ও গাছের ডালপালা লুটের মহোৎসব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বনবিভাগের এক কর্মচারী জানান, ঝড়ের পর লুটপাট চললে আমরা অনেককে বাধাঁ দিতে গেলেও পেরে উঠিনি। ঝড়ের সময় থেকে বন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। নিয়মানূযায়ী বন কর্মকর্তা হলেন এখানকার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সে হিসেবে ঝড় শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার এখানে আসা জরুরী ছিল। কিন্তু, তিনি ঝড়ের এতপড়ে এসেছেন যে ততক্ষণে গাছের মোটামোটা ডালপালা সবই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় সরকারীভাবে রোপনকৃত গাছগুলো ঝড়ে ভেঙ্গে পড়লেও স্থানীয় বন বিভাগ এ গাছগুলো উদ্ধারে তেমন আগ্রহী হননা। ফলে উপকারভোগীরা স্থানীয় এলাকাবাসীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝড়ে পড়া এসব গাছ কেটে ভ্যান এবং পিক-আপ যোগে ছ’মিল গুলোতে বিক্রি করে। অনেক কাঠ ব্যবসায়ী ঝড়ে উপড়েপড়া গাছগুলো কমদামে উপকার ভোগী ও বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ক্রয় করে থাকে।
শেরপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার আব্দুর রহিম গাছ লুটপাট হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, একসাথে অনেক গাছ পড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হয়েছে। গ্রামীন সড়কের পড়ে যাওয়া গাছ গুলো লুটপাট হয়নি। স্থানীয় উপকার ভোগীরা নিয়ে গিয়ে সংরক্ষন করেছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তদন্তপূর্বক স্থানীয় বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।