
সম্প্রতি ভারতে নারীদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলে এলেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম। এর আগে বাংলাদেশের দুজন ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে ডাক পেলেও জাহানারাই প্রথম ক্রিকেটার যিনি মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন।
দুটো ম্যাচ খেলেছেন, শেষ ম্যাচে দল হারলেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন জাহানারা আলম। খবর বিবিসি বাংলার
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে এর আগে সাকিব আল হাসান, মাশরাফী বিন মোত্তর্জা, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ডাক পেয়েছিলেন।
আইপিএল থেকে ফিরে জাহানারা আলম জানান, পেশার দিক থেকে এই টুর্নামেন্ট খেলে অনেক এগিয়েছি, আমার যে চিন্তাধারা ছিল সেটা অনেক বদলে গিয়েছে এই টুর্নামেন্টে। আমি বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে এসেছি আইপিএলে গিয়ে এটাই আমার বড় পাওয়া।
সেখানে গিয়ে জাহানারার অন্যতম বড় উপলব্ধি, যে উপায়ে বাংলাদেশে ক্রিকেটাররা উঠে আসেন সেটা পর্যাপ্ত নয়।
আমি মনে করি আমি যে উপায়ে এসেছি এটা পর্যাপ্ত নয়, আমি যথেষ্ট পরিশ্রম করি, কিন্তু পরিশ্রম আরো বাড়াতে হবে, আর দলের কারো সাথে প্রতিযোগিতা না করে বাইরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সাথে প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে তখন আমি বাংলাদেশের জয়ে ভালো অবদান রাখতে পারবো।
বাংলাদেশ ও ভারতের মেয়েদের ক্ষেত্রে পার্থক্য কতটা
প্রচুর, প্রচুর পার্থক্য, ওদের ঘরোয়া দলের স্ট্রাকচার এতোটাই শক্তিশালী যেমন, ওদের অনুর্ধ্ব ১৯ ও অনুর্ধ্ব ২৩ দল আছে, আর জাতীয় দল আছে, যেখানে বিভিন্ন লেভেলে বছরে ছয়টা টুর্নামেন্ট আছে, যার কারণে সহসাই দু তিনজন নতুন মুখ দেখাই যায়।
জাহানারা আলমের মতে ভারতের মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো ছেলেদের সাথে তুলনা করার মতো। নতুন একটা প্লেয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে এতো শক্তিশালী হয়ে আসে যে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলায় কোনো সমস্যা হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের সিনিয়র বা জুনিয়র ডিভিশন টুর্নামেন্ট নেই, আমাদের বছরে তিনটা টুর্নামেন্ট শিডিউল আছে, যেটা গত বছর মাত্র একটা আয়োজিত হয়েছে, এবছর হচ্ছে দুটো। আমাদের অবকাঠামোটা উন্নতি করতে হবে, আমাদের বয়সভিত্তিক দলও নেই মেয়েদের, সেটা থাকলে তখনই একটা প্রতিযোগিতায় আসতে পারবে।
অবকাঠামোর দিক থেকে পিছিয়ে থেকেও বাংলাদেশ ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা জিতে নেয় মেয়েদের এই দলটি।
আইপিএল ঘুরে এসে জাহানার যে আত্মউপলব্ধি
আমি এগারো বছর ক্রিকেট খেলছি, এশিয়া কাপ জিতেছি দশ বছরের মাথায়, এতোদিন ধরে খেলে বাইরের একটা লিগে খেলতে পেরেছি, কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে যদি বছরে মাত্র একটা বা দুইটা টুর্নামেন্ট থাকে, সেক্ষেত্রে আসলে এভাবে চলতেই থাকবে কেউ বড় স্বপ্ন দেখবে না।
পেশাদারিত্ব অনেক বড় ব্যাপার বলে মনে করেন জাহানারা, নিয়মিত যদি খেলার মধ্যে থাকে বাংলাদেশের মেয়েরা, সেক্ষেত্রে মেয়েরা আরো সচেতন হবে খেলার প্রতি এবং পারফর্ম করার তাগিদ থাকবে। এমনকি বাবা-মায়েরাও আরো বেশি বেশি মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে পাঠাবে।
ডাক পেলেন যেভাবে
প্রথমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে নারী আইপিএল কর্তৃপক্ষ ই-মেইল করে, বাংলাদেশ থেকে জাহানারা আলমকে পছন্দ করেছেন তারা, আমার কোনো খেলা আছে কি না এটা জানতে চেয়ে।
বিসিবি থেকে আমাকে জানানো হয় আমি খেলবো কিনা, আমি খুব চমকে যাই, আমার উত্তর ছিল কেন নয়, যদিও আমার ঘরোয়া ক্রিকেট চলছিলো, এটাকে কনসিডার করে আইপিএলে খেলতে চাই।
ক্রিকেট বোর্ড থেকেও অনেক খুশি ছিলেন সবাই, বলছিলেন নারী ক্রিকেটের জন্য এটা বড় অর্জন, আমার যাওয়া উচিৎ।