গত ৬ই মে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবার কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির পালা। আর ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেল একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির কার্যক্রম। শনিবার মধ্যরাতে ভর্তির আবেদন গ্রহণের এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মাধ্যমিকে কৃতকার্য শিক্ষার্থীরা অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে।
যেভাবে আবেদন করতে হবে
আবেদনকারীকে প্রথমে মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক, গ্রামীণ ও মোবাইল ব্যাংকিং শিওরক্যাশ ও বিকাশের মাধ্যমে আবেদন ফি জমা দিতে হচ্ছে। টাকা জমা দেয়ার পর ‘কনফার্মেশন’ এসএমএসের ভিত্তিতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। শনিবার বিকালে ওয়েবসাইটটি (http://www.xiclassadmission.gov.bd/) উন্মুক্ত করা হয়।
তবে রবিবার দুপুরে আবেদন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি রবিবার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন নেয়া শুরু হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক যুগান্তরকে বলেন, এবারও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি এবং সর্বনিু পাঁচটি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করতে পারবে। এসএমএসে অবশ্য একবারে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করা যাবে।
বাবা/মায়ের পরিচয়পত্র নম্বর ও কলেজ ক্যাটাগরি
আবেদনে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে এবার বাবা অথবা মায়ের যে কোনো একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জিম্মি করতে না পারে, সেজন্য এবার প্রথমবারের মতো ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন কলেজের তিনটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৮২ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৪৫টি কলেজ আছে। এ বোর্ডের ১০২০টি কলেজের মধ্যে বাকিগুলো ‘সি’ ক্যাটাগরির।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. হারুন-অর-রশিদ জানান, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এ ক্যাটাগরি করা হয়েছে; যাতে তারা ভালো কলেজ বেছে নিতে পারে। এবার মেধাক্রমও থাকবে। কলেজে আবেদন করতে গেলে শিক্ষার্থী নিজের মেধাক্রম দেখতে পারবে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানে সে চান্স পাবে কিনা বা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা বুঝতে পারবে। এতে আবেদন সম্পর্কিত জটিলতা ও সংকট থেকে শিক্ষার্থীরা রেহাই পাবে।
আবেদনের সময়সীমা
তিনটি ধাপে আবেদন নেয়া হবে। প্রথম ধাপে ২৩ মে পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এ পর্যায়ে ১০ জুন ফল প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯ ও ২০ জুন আবেদন করা যাবে। ২১ জুন ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে ২৪ জুন আবেদন করা যাবে। ২৫ জুন ফল প্রকাশ করা হবে। ২৭ থেকে ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত কলেজে ভর্তি হতে হবে। ১ জুলাই শুরু হবে ক্লাস।
আবেদন ফী
অনলাইনে আবেদন ফি ১৫০ টাকা নেয়া হবে। তবে মোবাইল ফোনে প্রতি এসএমএসে একটি করে কলেজে আবেদনে ১২০ টাকা কাটা হবে। তবে এসএমএস এবং অনলাইন মিলিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না। আবেদন কার্যক্রম শেষে শিক্ষার্থীকে কলেজ দেয়ার পর তাতে ভর্তি নিশ্চায়ন (রেজিস্ট্রেশন) করতে হবে। এজন্য গত বছর ১৮৫ টাকা নেয়া হতো।
এবার এর সঙ্গে আরও ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৯৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ভর্তি বিলম্ব ফি ৫০ টাকার বদলে ১০০ টাকা করা হয়েছে। পাঠবিরতি বা ইয়ার লস শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকার বদলে ১৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভর্তির সব আসন মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় রাজধানীতে ৫ শতাংশ, বিভাগীয় ও জেলা সদরে ৩ শতাংশ পূরণ করা হবে।
কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
দেশের সব পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ইন্সটিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস, গ্রাফিক্স আর্টস ইন্সটিটিউট, ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউট, বিভিন্ন সার্ভে ইন্সটিটিউট, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম রবিবার শুরু হচ্ছে। একটানা ৮ জুন পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ফলপ্রকাশ করা হবে ১৫ জুন। পরদিন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত মূল মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্তরা ভর্তি হতে পারবে। ২৯ জুন থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষমাণ তালিকার প্রার্থী ভর্তি করা হবে।
গত ৬ই মে সকাল ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের সারসংক্ষেপ ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলে মাধ্যমিকে এ বছর পাশের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে স্কুলবোর্ডে এসএসসিতে পাশ করেছে ৮২ দশমিক ৮০ ভাগ। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের দাখিল পরীক্ষায় পাশের হার ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ, আর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে পাশের হার ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এবার উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ শিক্ষার্থী।
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন ছাত্রী এবং ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ জন ছাত্র।