
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় সরকার, কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে তার জবাব দিতেও প্রস্তুত থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, মুসলিম উম্মাহ’র একসঙ্গে থাকা উচিত। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে মধুর বন্ধনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কোনো বৈরিতা নয়।
তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সৃষ্ট সংঘাতে ওই দেশগুলোর জনগণকেই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এজন্য মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা আলাপ- আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে নবনিযূক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নাওফর প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে শেখ হাসিনা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতি দিয়ে ইহসানুল করিম বলেন, ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন অভিন্ন বাংলাদেশ সবসময় সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাস করে কারো সঙ্গে সংঘাত নয়।
ইরানের জনগণকে সাহসী হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইরানের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অসাধারণ দিকসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের জীবন-মানের উন্নয়নে তার সরকার কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছি এবং আমাদের উন্নয়ন নীতিমালা হচ্ছে গ্রাম কেন্দ্রিক।
বাংলাদেশে বিরাজমান ধর্মীয় সম্প্রীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সব ধর্মের মানুষ একত্রে যেকোন ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে।
তিনি বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে ইরানের রাষ্ট্রপতির প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালিন তার সরকারের পক্ষে থেকে সম্ভাব্য সব রকমের সহযোগিতা প্রদানে রাষ্ট্রদূতকে আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে ষষ্ঠ ন্যাম সম্মেলন এবং ১৯৯৭ সালে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে তার ইরান সফরের কথা স্মরণ করেন।
ইরানের রাষ্ট্রদূত বৈঠকে ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে তার দলের বিপুল বিজয়ে ইরানের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
রেজা নাওফর শেখ হাসিনাকে একজন বিচক্ষণ ও দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, আমরা ইরানের সব মানুষ আপনাকে ভালবাসি।
তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সুষম উন্নয়ন নীতিমালার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মেল বন্ধনের উল্লেখ করে রেজা নাওফর বলেন, আমাদের এই সম্পর্ককে আমাদের আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল সহযোগিতা রয়েছে। রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কও সুন্দর অবস্থানে রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এটি বর্তমানে সন্তোষজনক অবস্থা নেই। ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে নতুন এই রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে ঐহিত্যগত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যে বন্ধন আছে সেটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, পশ্চিমা অবরোধ সত্ত্বেও ইরান এগিয়ে চলছে। ওই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে তাদের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ প্রবণ দেশ না।
পশ্চিমা অবরোধ সত্ত্বেও ইরান এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা এই অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করে যাচ্ছি, কেননা আমরা কোন যুদ্ধবাজ দেশ নই।
এই অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেকোন উদ্যোগকে ইরান স্বাগত জানাবে, বলে জানান ইরানের রাষ্ট্রদূত।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসে শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইরানের নতুন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নাফার।
তার দেশের মানুষও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে খুব পছন্দ করেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা কমাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোনো উদ্যোগ নিলে ইরান তা স্বাগত জানাবে বলে মন্তব্য করেন নাফার।
মুসলিম দেশগুলোর এক থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। দুটি মুসলিম দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হলে জনগণ ভূক্তভোগী হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে গ্রামের উন্নয়নের পাশাপাশি ধর্মীয় সম্প্রীতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সৌজন্য সাক্ষাতে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও কার্যালয় সচিব সাজ্জাদুল হাসান।সূত্র- আরটিএনএন