
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় নিপা ভাইরাসের কারোনে একই পরিবারের পাঁচজনে মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে জন সচেতনতা ও ভাইরাস প্রতিরোধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জেন ডা. আবু মোহাম্মদ খয়রুল কবির। সোমবার দুপুর ১২টায় ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জেন কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন. শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাজাহান নেওয়াজ, মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. তোজাম্মেল হক, প্রেসক্লাব সভাপতি মনসুর আলী প্রমুখ । উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নয়াবাড়ি মরিচপাড়া গ্রামে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বাবা-মা ও দু’সন্তান সহ একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।এদের মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি ফজর আলীর ছেলে তাহের আলী (৫৫) মারা যান। এ ঘটনার ১১ দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি একইভাবে মারা যান জামাতা হাবিবুর রহমান (৩৫) এবং পরের দিন মারা যান তাহের আলীর স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫)। এর দু’দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি তার দুই ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) ও মেহেদী হাসানও (২৪) মারা যান।
এ ঘটনায় আইইইডসিআর, আইসিডিডিআর, ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি দল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী মরিচপাড়া গ্রাম ও হাসপাতালগুলোতে তদন্ত চালিয়েছিল।
সিভিল সার্জেন ডা. আবু মোহাম্মদ খয়রুল কবির সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভান্ডারদহ নয়াবাড়ি এলাকায় গবেষক দল সরেজমিনে তদন্ত এবং রোগের নমুনা পরীক্ষার পর রোববার রোগতত্ত, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অজ্ঞাত রোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
তিনি আরও জানান ,আইইডিসিআর পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, রোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত ব্যক্তিদের সকলের জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি ও মস্তিষ্ক ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে হতে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং উক্ত নমুনায় নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উপরোক্ত আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশনে প্রথম মৃত ব্যক্তির খেঁজুরের কাঁচা রস পান করেছিল বলে সন্দেহ করা হয় এবং পরবর্তীতে অন্যান্য মৃত ব্যক্তিগণ প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিল বলে আইইডিসিআর ধারণা করছে।
এছাড়া জীবিত সন্দেহাভাজন রোগীদের রক্তে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি না পেলেও বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নিপা ভাইরাস রোধে আইইডিসিআর সবাইকে খেঁজুরের কাঁচা রস পান না করার পরামর্শ দিয়েছে।
তাই ঠাকুরগাঁও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলায় সর্বত্র খেজুরের ও তালের রস বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ জন মৃত্যুর ঘটনার ওই এলাকায় একটি শুকোরের খামার রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সেটি নিয়েও চিন্তা করছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের নিপা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (মাস্ক পরে) আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবাদানের পরামর্শ দিয়েছে ।