
গাইবান্ধায় সদরের বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মধুপুর বালক হাফিজিয়া মাদ্রাসার জমি দখল করে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে জেলা ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ হক্কানীর মেয়াদ উত্তীর্ণ ইটভাটাতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ নিরব ভূমিকায় প্রশাসন। জনমনে নানা প্রশ্ন।
সদর উপজেলার বল্লমঝাড় মাদ্রাসার জমি দখল, বসতবাড়ীর পাশে পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে চালানো মেয়াদ উত্তির্ণ ইটভাটা কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
গাইবান্ধায় জেলা জুড়ে প্রতিবছরই ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব ভাটা স্থাপনে লাইসেন্স গ্রহণের কথা থাকলেও ইটভাটা মালিকেরা আমলে নিচ্ছে না । প্রশাসনের সামনে এভাবে ইটেরভাটা স্থাপন করা হলেও কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। গত দুই এক বছরের মধ্যে ২/১ টি অবৈধ ইটভাটায় জরিমানা করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞাত কারণ দেখিয়ে নিচ্চুপ থাকছে প্রশাসন।এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ হক্কানীর মেয়াদ উত্তীর্ণ অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চলছে সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে ১৯৯২ সালে স্থাপিত হয় N.S.L BRICK ‘ S ইটভাটাটি । মধুপর বালক হাফিজিয়া মাদ্রাসা পিছনে মাদ্রাসার ক্লাসরুম সাথে এমনকি মাদ্রাসার জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে এলাকার প্রায় ৩ একর ফসলী জমি নিয়ে এই ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। যার পিছন অংশ স্থানীয়দের বসতবাড়ী। শুধু তাই নয়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠের গুঁড়ি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এধরণের ঘটনা ঘটলেও কেউ তা দেখছে না।
অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ ধরণের ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে যেমন প্রতিনিয়ত অবৈধ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
এবিষয়ে উক্ত ভাটা মালিক ও জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ হক্কানী সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ম্যানেজার বাবুর সহিত কথা হলে তিনি মাদ্রাসার জমি দখলের বিষয়টি স্বীকার করে জানান,মাদ্রাসায় জমি দানকারী ব্যক্তি এই ইটভাটায় কর্মরত রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, আইন কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে প্রভাশালী এ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তি ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে এ অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনী হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, এক তথ্যে জানা গেছে, ২০১৭ সালে তিনটি অবৈধ ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ২০১৬ সালে কারো কোন জরিমানা করা হয়নি। তবে ২০১৫ সালে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের কাছে জরিমানা আদায় করা হয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এধরণের ২/১ টি ঘটনা ঘটলেও আর বেশিকিছু করা হয়নি।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাটা স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে ১ কি.মি. জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কথা। কিন্তু গাইবান্ধার কোন ইটভাটা মালিকই এসব শর্ত মানছে না। আর যেসব ইটভাটা চালু রয়েছে তার অধিকাংশ মালিকই জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোন লাইসেন্স গ্রহণ না করেই বছরের পর বছর ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের একটি সুত্র জানিয়েছে, এ জেলায় গত ৩ বছরে মাত্র ২৭টি ইটভাটা মালিককে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৮টি ইটভাটার লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে। বাকি ৯টির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ওই ইটভাটা মালিকরা তা আর নবায়ন করেননি। প্রশাসনের একটি সুত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি এ পর্যন্ত জেলায় ১০১টি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই জেলা প্রশাসনের কাছে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য এখনও আবেদন করেননি। তবে বেসরকারি একটি সুত্র জানিয়েছে, প্রতিবছরই ভাটার সংখ্যা বাড়ছে। এবারও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক ইটভাটার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে বলে ওই সুত্রটি দাবি করেছে। ওই সুত্রের মতে আরও ইটভাটা স্থাপনের কাজ চলছে। এদিকে আয় কর বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর তিনি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৮৫টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।