
আজ ১২ ডিসেম্বর গাইবান্ধা জেলার প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং বিভীষিকাময় দিনের শেষে আজকের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট এ এলাকার মানুষ সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে পাক হানাদারেরা। ফলে চূড়ান্ত বিজয়ের ৩ দিন আগেই স্বাধীনতার স্বাদ পান এখানকার মুক্তিকামী মানুষ। সেই সঙ্গে আনন্দ আর উৎফুল্লে ফেটে পড়েছিল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সকল মুক্তিকামী মানুষ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. নূরুল ইসলাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান,১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় গণহত্যার খবর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এসে পৌঁছায়। তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য স্বাধীনতা পাগল জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। সংগ্রাম কমিটি গোবিন্দগঞ্জের অদূরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের কাঁটাখালী সেতুটি ধ্বংস করে পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর ২৬ মার্চ সারারাত চলে প্রস্তুতি। পরের দিন ২৭ মার্চ সকালে শত শত মুক্তি পাগল তরুণ যুবক-ছাত্র জনতা কোদাল, শাবল, হাতুড়ি, খুন্তি ইত্যাদি নিয়ে ট্রাকযোগে আবার কেউ হেঁটে পৌঁছে কাটাখালীতে। সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং সেতুটি ধ্বংস করতে যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে শুরু করে ভাঙার কাজ। তিনি আরো জানান, এরপর সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্রীজের উত্তর পাশে কিছু অংশ ভাঙা হলে হঠাৎ করে রংপুরের দিক থেকে পাক বাহিনীর একটি কনভয় ছুটে আসে ব্রীজের কাছে। কনভয়টি পৌঁছেই এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে মুক্তিপাগল বাঙ্গালীর ওপর। এ সময় নিরস্ত্র বাঙ্গালী জনতা প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে ছুটে পালাতে গেলে হানাদারের এলোপাতাড়ি গুলির আঘাতে শহীদ হন আবদুল মান্নান আকন্দ, বাবলু মোহন্ত, বাবু দত্তসহ অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোর ও এক বৃদ্ধ। তখন থেকে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে হিলি, গাইবান্ধা এবং বোনারপাড়া ও মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণে প্রায় দুইশ’ পাকসেনা নিহত হয়। এ সময় ভয়ে পালিয়ে যায় অন্যান্য পাকসেনারা। পরদিন ১২ ডিসেম্বর জয়বাংলা স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে স্বাধীনতাকামী গণমানুষের বিপুল হর্ষধ্বনীর মধ্যদিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র-জনতা হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা উত্তালন করে। এ দিনটিতে হানাদার মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা। স্বাধীনতার পর থেকে ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।