
নিউজ ডেস্ক
সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও কার্যত থেমে নেই কোনো পক্ষ। নামে-বেনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল প্রচারণা, যার একটি বড় অংশই আবার নেতিবাচক প্রচারণা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি নানা ধরণের প্রচারণার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনের মূল প্রচার শুরু হওয়ার কথা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ই ডিসেম্বরের পর থেকে বা ভোট গ্রহণের ২১ দিন আগে থেকে।
এর মধ্যে যারা নিজের উদ্যোগে পোস্টার-ব্যানার ছাপিয়ে যেখানে-সেখানে টাঙ্গিয়েছিলেন, সেগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও শহরের নানা জায়গায় টানানো এসব ব্যানার-পোস্টার সরাতে দেখা গেছে। কিন্তু ফেইসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার বা প্রচারণার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম-কানুন না থাকায় তুমুল পাল্টাপাল্টি প্রচার-প্রচারণা চলছে এ প্লাটফরম ব্যবহার করে।
আর এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রচারণার কৌশল ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজনের দুই পাড়ে থাকা দুপক্ষকেই। তবে একে অন্যের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের নেতিবাচক বা হেয় করার জন্য কোনো প্রচারণা চালানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
কী ধরণের প্রচার বা প্রচারণা হচ্ছে?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় কাভার ফটোই করা হয়েছে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে আর সেখানে লেখা রয়েছে ‘নৌকা জনগণের মার্কা জননেত্রী শেখ হাসিনা’।
এ পেজটিতেই একটি ইভেন্ট পেজ খোলা হয়েছে – যার শিরোনাম ‘৩০ ডিসেম্বর সারাদিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন’। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নানা বিষয় উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রচার চালানো হচ্ছে এ পেজ থেকে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ওয়েবসাইটে সে অর্থে ডিজিটাল প্রচার তেমন একটা চোখে পড়ছে না। তবে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় কাভার ফটো হিসেবে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে একটি ব্যানার রয়েছে।
তারপর ২০০৫ সালে একটি অনুষ্ঠানে দেয়া দলের নেতা তারেক রহমানের একটি বক্তব্য রয়েছে। সাথে রয়েছে ধানের শীষ হাতে তারেক রহমানের একটি ছবি। এছাড়া পেজটিতে বিএনপির নির্বাচন সম্পর্কিত নানা ব্রিফিংয়ের ছবি ও বক্তব্য রয়েছে।
তবে নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিভিন্ন নামে খোলা ফেইসবুক পাতায়। অ্যা ডটারস টেল শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র কিন্তু ফেইসবুক পাতায় একটি পোস্টে তার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে টেকনাফে নিহত কাউন্সিলর একরামুল হকের কন্যার বহুল প্রচারিত উক্তি
তুমুল নেতিবাচক প্রচারণা: চালাচ্ছে কারা?
আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় বিএনপি শাসনামলের সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা বিষয় তুলে ধরে একটি পোস্টে বলা হয়েছে ‘ভোট দেয়ার আগে একটু ভাবুন’।
পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলে তারা যেটিকে সাফল্য মনে করছেন সেসব বিষয়গুলো তারা তুলে ধরছেন। তবে এর বাইরে ফেইসবুকেই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং বিএনপির বিপক্ষে নানা ধরণের প্রচার চালাচ্ছেন এমন লোকজন, যারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব প্রচারণায় সম্প্রতি বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা থেকে শুরু করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড: কামাল হোসেন অতীতে বিএনপি বা ধানের শীষের বিরুদ্ধে যেসব বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেগুলোও উঠে এসেছে।
একটি পোস্টে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সাম্প্রতিক সহিংসতার একটি ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে ‘বিএনপির হামলা ছিলো পূর্বপরিকল্পিত’। এখানে ছবিতে বিএনপির একজন নেত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ফেইসবুকে এ ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছেন এমন কয়েকজনকে বিষয়টি নিয়ে জানতে এবং এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করে ইনবক্সে বার্তা দিলেও তারা কোনো জবাব দেননি।
অন্যদিকে, আরেকটি ফেইসবুক পাতায় সরকার বা আওয়ামী লীগ বিরোধী ডিজিটাল প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা হাজার হাজার সংখ্যায় শেয়ার হচ্ছে।
তাদেরই একটি পোস্টে ব্যঙ্গ করা হয়েছে সম্প্রতি প্রদর্শিত ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’ তথ্যচিত্র নিয়ে। আবার আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে ‘আদিবাসী সাঁওতালদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দখল করতে নৌকায় ভোট দিন’। এ পাতাতেও কথা বলার জন্য বার্তা দিলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাই এটি যারা চালান, তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
কী বলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি?
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলছি যে আমাদের কার্যক্রমের প্রতিফলন আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট ও ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় রয়েছে। আমরা নেতিবাচক প্রচারণায় বিশ্বাস করিনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতের অপকর্ম জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়া আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব’। চৌধুরী বলেন, ভোটের প্রচার শুরু হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শিষ্টাচারকে মাথায় রেখেই তারা প্রতিপক্ষের ব্যর্থতা ও দুর্বলতাগুলো ভোটারদের কাছে তুলে ধরবেন।
তাহলে বিএনপি, খালেদা জিয়া বা ড. কামাল হোসেনকে আক্রমণ করে যেসব ফেইসবুক পোস্ট দেখা যায় সেগুলো কারা করছে? – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার বক্তব্য বা প্রচার ডিজিটাল পদ্ধতিতে যা করে, সেটি অফিসিয়াল পাতার মাধ্যমেই করে। তাই এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই’।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বিরোধী যেসব প্রচারণা চলছে, সেগুলোর জন্য বিএনপি দায়ী নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
‘একটা রাজনৈতিক বক্তব্য যেখানে দেয়া যায় না ঠিক মতো, সেখানে আমরা কী করে নেতিবাচক প্রচারণা করবো’? তিনি বলেন, ‘তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবেন, সেটিই হবে ডিজিটাল প্রচারণায় আমাদের মূল উপজীব্য বিষয়’।
শামা ওবায়েদ অবশ্য বলছেন, বেনামে কোনো প্রচারণার সাথে তার দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।সুত্র-বিবিসি বাংলা