
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পুলিশ বিপুল সংখ্যক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
বিএনপি নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে এবং তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার জন্য পুলিশ- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
এতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নয়াপল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে এক ঘন্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকমী ও পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের একজনকে আঞ্জুমানে মফিদুলের গাড়িতে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য বুধবার সকাল ১০টা থেকে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের ভিড়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। বেলা পৌনে ১টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় দুইপক্ষে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে বিএনপি কর্মীরা পুলিশের তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে সেখানে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজনের ভাষ্য, হঠাৎ করে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এরপরই বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
ওই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারাও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন।
এঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে সমাবেশ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘পল্টনের ঘটনা সরকারের পরিকল্পিত। সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে।’
সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের নির্দেশে বিনা উসকানিতে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে।
রিজভী বলেন, ‘আমরা শান্তির পক্ষে। সরকারের নির্দেশে পুলিশ বিনা উসকানিতে এই আক্রমণ করেছে। তারপরও আমরা অশান্তির পথে হাঁটব না। সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপনাদের শান্ত হতে বলেছেন। আপনারা রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে বসে পড়ুন। এটা তারেক রহমানের নির্দেশ। সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেবেন না। আপনারা শান্ত হোন।’
তবে সংঘর্ষের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই তারা পিকেটিং করেছে, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ আহত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ধৈর্য ধরে সামাল দেওয়ার। তবে আমরা এখন পর্যন্ত অ্যাকশনে যাইনি। এটা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। পুলিশের দুটি গাড়ি পোড়ানো ছাড়াও সাঁজোয়া যানে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। এরপর যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ীই কাজ করা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এ ঘটনায় বিএনপিকে দায়ি করে বলেছেন, বিনা উস্কানিতে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।
অন্যদিকে বুধবার দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে নয়া পল্টনে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হমলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের আগের মুখোশই ফুটে উঠেছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যের পর এ হামলার কথা শুনেছেন, তিনি সবাইকে ধর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে বিএনপি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো চলছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি।
মনোনয়ন ফরম বিক্রির তৃতীয় দিনে বুধবার সকালের দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল। অনেকেই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। কর্মী-সমর্থকরা নেতার ফরম সংগ্রহের সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং স্লোগান দিচ্ছেন।
এ সময় মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত সিনিয়র নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত ১০টি বুথে একযোগে এ মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সকাল থেকেই নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে পুলিশের উপস্থিতি বেশি ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত। এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে পুলিশ নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরাতে গেলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।