
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই এলাকার সাধারন মানুষ। আশ্চর্জজনক হলেও সত্য যে,মাত্র দু’জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বিগত ২০০৭ সালে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে ৩১ শয্যার বরাদ্দ দিয়েই স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
বিগত ২০১১ ইং সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সটিকে আধুনিকায়ন করতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতিও সরবরাহ দেয়া হয়। নিয়োগ দেয়া হয় একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। সেই সুবাদে গাইনী বিশেষজ্ঞও যোগদান করেন। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারে সিজার অপারেশন শুরু হয়। শুরুতেই অপারেশন থিয়েটারে ৪/৫টি সিজার করা সম্ভব হলেও গত ৭ বছরে আর কোন সিজার অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। টানা ৪/৫ মাস পীরগঞ্জবাসী সুফল পেলেও বর্তমানে গাইনী বিশেজ্ঞ না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার প্রসুতিরা। ৬ বছর আগে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য
কমপেক্সকে ই.ও.সি কার্যক্রমের আওতাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে জটিল প্রসুতিদের জরুরী অপারেশনের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৪৮ কিঃ মিঃ দুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হয়। যে কারনে দীর্ঘ যাত্রায় প্রসুতিরা নানা জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। শুধু কি তাই, হাসপাতালে চিকিৎসক এর পদ সংখ্যা ২২টির মধ্যে কাগজে কলমে মাত্র ৩ জন কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন ধরে জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থেপেডিক্স ও ডেন্টাল সার্জেনসহ সবগুলো পদ পদ শুন্য রয়েছে। ৩ জন চিকিৎসক থাকলেও বাস্তবে সেবা দিচ্ছেন দু’জন। এরা হচ্ছেন ডা: তাবাচ্ছুম ও ডা: বকুল চন্দ্র। অধিকাংশ সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী দিয়ে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে জরুরী চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ফলে ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের হাতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও ৮টি পদ শুন্য রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকটের পাশাপাশি রয়েছে কর্মচারি সংকট।
দীর্ঘদিন থেকে নার্সিং সুপারভাইজারের পদটি শুন্য রয়েছে। কার্ডিওগ্রাফার, ল্যাব: এটেনডেন্স, কুকমার্শাল,আয়া ওয়ার্ড বয় পদ থাকলেও ওগুলো শুন্য রয়েছে। ৩টি ওয়ার্ড বয়ের পদ থাকলেও ১জন ওয়ার্ডবয় রয়েছেন। তিনি অসুস্থ্য থাকায় প্রক্সি দিয়ে তার কাজ চালানো হচ্ছে। হাসপাতালে ৪ জন এমএলএসএস মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১ জন। উক্ত এমএলএসএস সব সময় ইমার্জেন্সীতে কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী আসনে যদি জোড়া তালি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় তাহলে সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবার কি অবস্থা ? উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হরেন্দ্রনাথ গোস্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় একমাত্র কনসালটেন্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: এম হাকিম ভারপ্রাপ্ত হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারে হার্নিয়া, হাইড্রোসিল, এ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের অপারেশন বন্ধ রয়েছে চিকিৎসকের অভাবে।
টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম চালু করা হলেও তা মাস খানে এর মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জটিল গুরুতর রোগীদের প্রজেক্টরে দেখিয়ে ঢাকার বিশেজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলায় ১৫ টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৫১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। সে গুলোতে প্রশিক্ষিত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডাররা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন”। পীরগঞ্জ হাসপাতাল নিয়ে কথা হলে সিভিল সার্জন বলেন-৩১ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও তা কাগজে কলমে রয়েছে। এখনও প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়নি। যে কারনে এখনও ৫০ শয্যার সুবিধে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারিভাবে পুর্বের নিয়মে ৩১ শয্যার বরাদ্দ আসছে বরাবর। পীরগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট কাজী লুমুম্বা লুমু প্রসাশনিক ভাবে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সটি ৫০শয্যায় উন্নতি করে নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়ম দুর করে সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানান। এদিকে এই স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সটি ৫ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও অধিকাংশ সময়েই এখানে ৭০ জনের বেশী রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে পার্শ্ববর্তী সাদুল্যাপুর (গাইবান্দা) উপজেলা এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসা সেবা নিতে প্রায়ই এই হাসপাতালে ভীড় করেন।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত এখানে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটিভরা মেডিক্যালের ডাক্তারের মাথার উপর ভীর করেন, তারা বলতে থাকনে স্যার আমার কোম্পানীর ঔষধটি লিখুন।
ফলে প্রায় সময়ই ওষুধ সহ স্যালাইন ইত্যাদির চরম সংকট দেখা দেয়। প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার লোকজন। বর্তমানে চিকিৎসক সংকটের কারনে এবং তুলনামুলক বেশী রোগীর আগমনে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্মরত চিকিৎসকদ্বয়। জরুরী ভিত্তিতে এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে চান অত্র উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষ।