
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গাড়িতে দেশলাই দিয়ে যে যুবককে আগুন দিতে দেখা যায়, তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস বৃহস্পতিবার সকালে এই দাবি করেন। মিশু বিশ্বাসের ভাষ্য, পুলিশের গাড়িতে যে যুবক আগুন দিয়েছেন, তার নাম শাহজালাল খন্দকার। তিনি পল্টন থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
একই ঘটনার সময় পুলিশের গাড়ির ওপর যে যুবককে লাফাতে দেখা গেছে, তাকেও শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এই সহকারী কমিশনারের। তার ভাষ্য, এই যুবকও ছাত্রদলের।
পুলিশ কর্মকর্তা মিশু বিশ্বাসের এই বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি। মিশু বিশ্বাস বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযান চালিয়ে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালাতে দেখা যুবক ও গাড়ির ওপর লাফাতে থাকা যুবক নেই বলে জানান মিশু বিশ্বাস।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আসামি করে পুলিশ তিনটি মামলা করেছে।বুধবার পল্টন থানায় এই মামলাগুলো করা হয়।
পল্টন থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নয়াপল্টনে হেলমেট পরা কিছু মানুষ এসে গাড়ির ওপরে আক্রমণ শুরু করল। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এই হেলমেট পরা লোকজন ছাত্রলীগের। অসমর্থিত খবরে আমরা এটা জানতে পেরেছি। আজকের এ হামলার সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিনা কারণে, বিনা উসকানিতে যখন নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিল আসছিল, সেখানে পুলিশ ঢুকে গিয়ে হঠাৎ করে বাধা দিতে শুরু করে এবং এরপরেই কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে, গুলি চালানো হয়েছে। বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তারপরে হঠাৎ করেই পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগাল। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগাল কারা?

নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনের কর্মসূচিকে বানচাল করা, নির্বাচনকে বানচাল করা। এই আক্রমণ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ নয়, এটা গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ, এটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের ওপর আক্রমণ।
তিনি বলেন, ‘যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে, বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, যখন উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তখনই এই আক্রমণ। সেই আক্রমণটা সরাসরি সরকারের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে এল।’
ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নয়াপল্টনের এই ঘটনার পর সন্ধ্যায় অফিস থেকে যারা বেরিয়েছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বগুড়ার সাবেক সাংসদ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলালুজ্জামান লালু, গ্রাম সরকার সম্পাদক আনিসউজ্জামান খান এবং খুলনা জেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির রেজা খানসহ কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটাকে আমরা হালকা করে দেখছি না। আমরা নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এই নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করব না। এর দায়দায়িত্ব বর্তাবে সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের ওপর ও সরকারের ওপর।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর সরকারের একটি নির্দিষ্ট মহল অভিযোগ করল যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা অত্যন্ত সাজানো একটি পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা হচ্ছে, এই সাজানো হামলা করে বিএনপিকে দায়ী করে আবার বিএনপির ওপর হামলা, নির্যাতন শুরু করা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আজকে সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এই প্লট তৈরি করেছে।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গতকাল দুপুরে হাজারখানেক নেতা-কর্মীর মিছিল পুরো রাস্তা আটকে দেয়। মিছিলটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে একটি লেন চালু করার চেষ্টায় পুলিশ লাঠিপেটা করলে সংঘাতের সূত্রপাত হয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীরাও খুব দ্রুত মারমুখী হয়ে ওঠেন। তাদের লক্ষ্য করে পুলিশ প্রচুর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছোড়ে। গুলি-টিয়ার গ্যাসের শেলের দ্রুম দ্রুম শব্দ, গ্যাসের ধোঁয়া, নেতা-কর্মীদের হইচই, ধর ধর চিৎকার, মানুষের ছোটাছুটি, হুড়মুড় করে দোকানের ঝাঁপ নামানোর শব্দ—সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
কিছু যানবাহন ভাঙচুর ও পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দেড় ঘণ্টার সংঘর্ষে ২৩ পুলিশ সদস্য এবং অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি উভয় পক্ষের।সূত্র-আরটিএনএন