
বিনোদন ডেস্ক
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর যে সিনেমাটি নির্মিত হতে চলেছে, তার প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ‘সরু ও রোগা চেহারার একজন বঙ্গবন্ধু’কে খুঁজছেন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল।
মুম্বাইয়ের এই বর্ষীয়ান পরিচালকই ছবিটি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন শেখ মুজিবের চরিত্রে বাংলাদেশের কোনও অভিনেতাকেই তিনি নিতে চান।
বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে বাংলাদেশে যে আবেগ জড়িত, একজন বিদেশি পরিচালক তার প্রতি সুবিচার করতে পারবেন না বলেও ঢাকাতে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন – কিন্তু শ্যাম বেনেগাল পরিষ্কার জানাচ্ছেন তিনি এই ধরনের সমালোচনা নিয়ে আদৌ ভাবিত নন।
২০২০ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে তার জীবন নিয়ে যে চলচ্চিত্র বা বায়োপিক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটির পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ সরকার মুম্বাইয়ের শ্যাম বেনেগালকে বেছে নিয়েছে প্রায় মাসদেড়েক আগেই।
বলিউডের ৮৩ বছরের এই প্রবীণ পরিচালক অবশ্য তার অনেক আগে থেকেই শেখ মুজিবকে নিয়ে গবেষণা ও পড়াশুনো শুরু করে দিয়েছিলেন, মুজিবের আত্মজীবনীও তিনি এর মধ্যে পড়ে ফেলেছেন।
এ মাসের গোড়ায় মুম্বাইয়ের তারদেওতে নিজের স্টুডিওতে বসে বেনেগাল বলছিলেন, ছবিটি বানানোর জন্য তিনি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত – এবং ছবির নামভূমিকায় কে অভিনয় করবেন তা নিয়েও তিনি ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছেন।
তার কথায়, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চাইব বাংলাদেশ থেকেই কোনও অভিনেতা এই চরিত্রে অভিনয় করুন – কারণ সেটাই বেশি সমীচীন হবে। আর তিনি একটু রোগা হলেই ভাল – কারণ জীবনের বেশিটা অংশ শেখ মুজিব নিজেও কিন্তু বেশ সরু আর রোগা ছিলেন’।
‘খুব কম লোকই এটা খেয়াল করেন যে শেখ মুজিবের যে বিশাল, ভারিক্কি চেহারার ছবিগুলোর সঙ্গে আমরা বেশি পরিচিত – সেটা তার জীবনের পরের দিকটার। শেষের দিকে তার কিছুটা ওজন বেড়েছিল ঠিকই, কিন্তু জীবনের বেশিটা সময় তিনি রীতিমতো রোগাই ছিলেন – যেমনটা টিপিক্যাল বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও অ্যক্টিভিস্টরা হন আর কী!’
শেখ মুজিবের চরিত্রে বাংলাদেশী অভিনেতা খোঁজার আর একটা কারণ মূল ছবিটা হবে বাংলাতেই – আর পরিচালক চান মূল অভিনেতার নিজের কন্ঠস্বরই সেখানে ব্যবহার করতে।
ফলে চেহারা একটু রোগা হলেও মুজিবের জলদগম্ভীর কন্ঠস্বর বা ব্যারিটোন ভয়েসটাও থাকতে হবে – আর অভিনেতা নির্বাচনে সেটাই প্রধান চাবিকাঠি।
শ্যাম বেনেগাল অবশ্য নিশ্চিত এই ধরনের উপযুক্ত অভিনেতা খুঁজে পেতে বড় একটা সমস্যা হবে না – আর পরে ছবিটা ডাব করা হবে হিন্দি, উর্দু বা ইংরেজিতেও।
বাংলাদেশের জাতির পিতাকে নিয়ে ছবি বানানোর দায়িত্ব কেন একজন বিদেশি পরিচালক পাবেন বলে বাংলাদেশে কেউ কেউ যে প্রশ্ন তুলছেন, সে ব্যপারে তার বক্তব্য কী?
প্রসঙ্গে শ্যাম বেনেগাল বলেন, ‘দেখুন, এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সত্যিই কঠিন। কিন্তু হাতের কাছেই তো উদাহরণ আছে – ভারতের মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে কী অসাধারণ ছবিই না বানিয়েছিলেন রিচার্ড অ্যাটেনবরো! আর সেই অর্থে বাংলাদেশের কাছে তো আমি সেরকম কোনও বিদেশিই নই!’
‘প্রশ্নটা হল কাজটা ভালভাবে করার যোগ্যতা আপনার আছে কি না, এবং এ ক্ষেত্রে জাতির পিতাকে বাংলাদেশ যে দৃষ্টিতে দেখে সেই মর্যাদার দাম আপনি দিতে পারছেন কি না! ভারতীয় না-হয়েও অ্যাটেনবরোর তো গান্ধীকে বুঝতে কোনও সমস্যা হয়নি!’
‘কাজেই আমার কাছে অন্তত এই প্রশ্নটার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই, তবে মানুষ অন্যভাবে ভাবতেই পারেন – সেটা তাদের ওপর!’, বলেন বেনেগাল।
মন্থন, অঙ্কুর, নিশান্তের মতো বিখ্যাত সব ছবির নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল ভারতে টেলিভিশনের জন্যও ‘ভারত এক খোঁজ’ কিংবা ভারতীয় রেলকে নিয়ে ‘যাত্রা’র মতো নানা এপিকধর্মী কাজ করেছেন।
জীবনীধর্মী ছবি বা তথ্যচিত্র বানিয়েছেন গান্ধী, নেহরু বা সুভাষ বোসকে নিয়েও। কিন্তু শেখ মুজিবের বায়োপিক বিতর্কমুক্ত রাখতে পারাটা যে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ – কাজ শুরু করার আগে সে কথা স্বীকার করতেও তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই!
সূত্র: বিবিসি