
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘মূলত ভোটারশূন্য করার জন্যই অবৈধ সরকার বিএনপির ওপর আগাম আক্রমণ শুরু করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে আন্দোলন বা নির্বাচনের কাজে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্যই এই আগাম অভিযান। আগামী নির্বাচনে বিএনপির এজেন্ট দেওয়া দূরে থাক, প্রার্থীও যাতে খুঁজে না পাওয়া যায়, সেজন্য সরকার মামলা-হামলার আগাম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।’
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সরকারি জুলুমের তীব্র কষাঘাতে সারা দেশ বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে। গোটা দেশকে ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত করার উদ্যোগ চলছে। একদিকে লাগামহীন গ্রেপ্তারের উন্মাদনা, অন্যদিকে গায়েবি মামলার জলোচ্ছ্বাসে সারাদেশ প্লাবিত।’
বিএনপির এই নেতা দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে বন্দরে ছুটে বেড়াচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া, গ্রাম ও শহর নেতাশূন্য, কর্মীশূন্য। তৃণমূলের ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে সভাপতি থেকে সর্বশেষ সদস্য পর্যন্ত সবার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সাধারণ সমর্থকরাও এই হামলার ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না।’
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভূক্ত না করায় সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার পছন্দমতো চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার নেই। সরকারই ঠিক করে দিচ্ছে কারা হবেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসক। তাই সরকার পরিবারসহ জনগণের দাবিকে পাত্তা না দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এমন চিকিৎসকদের দিয়ে তার মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ডাক্তারদের দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন দূরভিসন্ধিমূলক। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা নিয়ে এটি এক চরম তামাশা।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভূক্ত করার আশ্বাস দেওয়ার পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা রাখেননি বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দল হিসেবে প্রকৃতিগতভাবেই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের। চিকিৎসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অপরিণামদর্শিতার মাশুল একদিন তাদের দিতেই হবে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই খালেদা জিয়াকে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
সরকার সংসদের চলতি অধিবেশনে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল আনতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতকে উপেক্ষা করে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংসদীয় কমিটি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই আইন পাস করা হলে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই আইন করা হচ্ছে। শুধু গণমাধ্যমই নয়, সরকারবিরোধী যেকোনো সমালোচনার পায়ে জিঞ্জির পরাতেই এই আইন। যাতে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও উচ্চারণ করতে না পারে। এটি একটি ভয়ঙ্কর কালাকানুন।’