
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাজ্যের অন্তত ২০ মিলিয়ন মানুষ শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে,এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং এ খাতে যুক্তরাজ্য সরকারকে স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রতি বছর ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়।
দেশটির হারিয়েত মুলভানেই নামের একজন নারী তার ৪৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং তিনি তার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘আমি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি শারীরিকভাবে খুবই নিষ্ক্রিয় ছিলাম। আমি মনে করেছিলাম আমি খুবই সক্রিয় কিন্তু আসলে তা অলসতা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।’-হারিয়েত মুলভানেই এমনটি জানান।
দেশটির পুরুষদের তুলনায় মহিলারা ৩৬ শতাংশ বেশি নিষ্ক্রিয় থাকেন। যুক্তরাজ্যের প্রায় ১১৮ মিলিয়ন নারী শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়, অন্যদিকে দেশটির মাত্র ৮.৩ মিলিয়ন পুরুষ শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকেন।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন ‘নিষ্ক্রিয়’ শব্দ দ্বারা দেশটির সরকার কর্তৃক ১৫০ মিনিটের বেঁধে দেয়া নিয়মকে বোঝায়নি। দেশটির সরকার তার নাগরিকদেরকে সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মত কায়িক শ্রম দিতে বলেছে যাতে করে তারা নিষ্ক্রিয় না হয়ে পড়ে।
হারিয়েত মুলভানেই ব্যস্ত জীবনযাপন করতেন, তিনি কর্মক্ষেত্রে দিনে অন্তত ৮-১০ ঘন্টা সময় তার অফিসে বসে কাটাতেন।
এর পরে ঘরে ফিরে এসে তিনি তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতেন কিন্তু কখনো কোনো কায়িক পরিশ্রম করতেন না।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন তাদের করা এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের পুরুষেরা তাদের জীবনের পঞ্চমাংশই বসে কাটায় যা প্রতি বছরে ৭৮ দিনের সমান। অন্যদিকে এ হিসাবে দেশটির নারীরা বছরে ৭৪ দিনের মত বসে কাটায়।
বিপর্যয় আসার পূর্বেই চিন্তা করুন
হারিয়েত মুলভানেই SCAD নামক একটি বিরল কিন্তু মারত্মক ক্ষতিকর হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে সাধারণত তরুণ নারীরাই আক্রান্ত হন।
‘এটি অনেকটা আপনার পাঁয়ের নিচে কম্বল রেখে দেয়ার মত বিষয়’।–তিনি এমনটি জানান।
‘আপনি অনুভব করবেন আপনার জীবন একটি নির্দিষ্ট দিকে ছুটে চলছে, আপনার হয়ত কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে,আপনি হয়ত আপনার জীবন সম্পর্কে খুবই আশাবাদী।’
‘আমি আমার জীবনে কখনো দীর্ঘ মেয়াদী শারীরিক সমস্যায় ভুগিনি কিন্তু হঠাৎ করেই আমি আক্রান্ত হয়ে পড়ি।’
যুক্তরাজ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গড়ে ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ১৯-৬৪ বছর বয়স্কদের জন্য নির্দেশিকা-
কত পরিমাণে?
• সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিটের মত হালকা ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিটের মত কায়িক পরিশ্রম।
• সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করতে হবে।
• দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার পরে কিছু সময়ের জন্য এদিক সেদিক হাঁটাহাটি করা।
হলকা ব্যয়াম বলতে কি বোঝায়?
দ্রুত হাঁটা,সাঁতার কাটা,সাইকেল চালানো,টেনিস খেলা,পাহাড়ে চড়া,ভলিবল এবং বাস্কেটবল খেলা ইত্যাদি।
শ্রমসাধ্য ব্যায়াম বলতে কি বোঝায়?
নিয়মিত জগিং করা,দ্রুত সাঁতার কাটা,পাহাড়ে সাইকেল চালানো,নিজে নিজে টেনিস বল খেলা,ফুটবল খেলা,রাগবি খেলা,হকি খেলা,জিমে যাওয়া এবং মার্শাল আর্টে অংশ নেয়া ইত্যাদি।
একই সাথে ব্যায়াম এবং পেশী শক্তিশালী করা যায় কিভাবে?
দৌড়ানো,ফুটবল,রাগবি,নেটবল,হকি ইত্যাদি খেলার মাধ্যমে।
নারীদের ম্যরাথন
হারিয়েত মুলভানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তার জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ‘আমাকে পুনরায় চিন্তা করতে হবে আমার কর্মক্ষেত্র এবং আমার জীবনযাত্রা সম্পর্কে। এভাবে চিন্তা করে আমি আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছি।’
তিনি স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, ‘প্রথমেই এই প্রক্রিয়া খুবই ধীরে ঘটে।’
তিনি পরে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের MyMarathon নামের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন যার মাধ্যমে তিনি দৌড়ানো এবং দ্রুত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলেন।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন জানায়, বিশ্বব্যাপী শুধুমাত্র শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রতি বছর অন্তত ৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন এবং এটি বিভিন্ন রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করার ১০ টি কারণের অন্যতম একটি কারণ।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের মেডিকেল বিষয়ক পরিচালক বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার হার অতি উচ্চে এবং এর ফলে দেশটিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে।’
‘বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গিয়েছে, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি অন্তত ৩৫ শতাংশ এবং অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।’
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন অবশ্য অঞ্চল ভেদে এই চিত্রের ভিন্নতা পায়, যেমন- পশ্চিম ইংল্যান্ডে ৪৭ শতাংশ বয়স্ক ব্যক্তি প্রয়োজনের তুলনায় কম সক্রিয়।
দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৩৪ শতাংশ।
উত্তর আয়ারল্যান্ডে এই সংখ্যা ৪৬ শতাংশ অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে এই সংখ্যা ৪২ শতাংশ।
তবে স্কটল্যান্ডের ১.৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ৩৭ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় শারীরিকভাবে কম সক্রিয়।
সূত্র বিবিসি।