
রাজধানীর গোলাপবাগের একটি বাসা থেকে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় আংশিক গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তার স্বামীকে। আর ওই দম্পতির দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে অজ্ঞান অবস্থায়। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন জোছনার স্বজনরা।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূর নাম জোছনা বেগম (৩০)। তার স্বামী স্বপন মিয়াকে (৪০) গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আহত স্বামীর নাম স্বপন মিয়া। তিনি বেইলি রোডে ইনফিনিটি মেঘা শপের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। আর স্ত্রী জ্যোৎস্না ছিলেন গৃহবধূ। তাদের দুই সন্তানের নাম ইপ্তি (১৪), জোহা (৭)। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ৯ম শ্রেণিতে পড়ে করে ইপ্তি। আর জোহা স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
এই পরিবারের স্বজনরা শিশু দুটির বরাত দিয়ে জানান, মা জ্যোৎস্না তাদের পান খাওয়ান। এর পরপরই তারা ঘুমিয়ে পড়ে। পরে আর কিছুই দেখিনি তারা। স্বামী স্বপন মিয়া আরেকটি বিয়ে করেছেন, এমন সন্দেহ নিয়ে কিছুদিন ধরে পারিবারিক কলহ লেগেই ছিল।
জোছনার চাচাতো ভাই আবদুল করিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, স্বপন ও তার স্ত্রী জোছনার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আজও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়ার সংবাদ পেয়ে আমরা তাদের বাসায় ছুটে যাই।
আবদুল করিম জানান, ‘বাসায় পৌঁছে দেখা যায়, জোছনা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছেন এবং তার স্বামী স্বপন আংশিক গলা কাটা অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। তাদের দুই সন্তান ইফতি ও তোহাকেও আহত অবস্থায় পাওয়া যায়।’
পরে সবাইকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে বেলা দেড়টার দিকে চিকিৎসক জোছনাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান আবদুল করিম। শিশুদের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে নিহতের চাচাতো ভাই জানান, ধারণা করা হচ্ছে, দুই সন্তানকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। তাদের পাকস্থলী পরিষ্কার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর গলাকাটা অবস্থায় স্বপন বর্তমানে হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন।
জোছনার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ অালী জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেড়ে স্ত্রী জ্যোৎস্না সন্তান দুটিকে অচেতন করে স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন। পরে তিনি নিজে পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন! তবে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। আহতরা চিকিৎসাধীন।
ঢামেক হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, স্বপনের ঘাড়ে তিনটি, গলার নিচে একটি ও বাম হাতে ধারালো অস্ত্রের একটি গভীর অাঘাত রয়েছে। তার অবস্থা অাশঙ্কাজনক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অাঘাতের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, কেউ তাকে অাঘাত করেছে।সূত্র-আরটিএনএন