
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এসময় মজলিসের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বুলবুলি হুজুর উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে।
শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনি সমঝোতার কথা জানায় জাপা ও মজলিসের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, ইসলামী মহাজোট চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব এম এ মতিন, মজলিস মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বিএনএ মহাসচিব অ্যাড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মো. জালাল উদ্দিন।
ইসলামি মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাছের ওয়াহেদ ফারুক। তিনি বলেন, ‘ইমামতির জন্য কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন, সেটা এরশাদের আছে। আমরা তাকে আমাদের নেতৃত্ব বা ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছি। কারণ, কোনো মহিলাকে ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া যায় না।’
জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের খেলাফত মজলিসের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আশা করি, যে আশা নিয়ে এসেছেন, তা আশা সফল হবে।’
জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে ‘ইসলামি উম্মাহর অনন্য নেতা’ অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, এটা আমাদের সৌভাগ্য। তাই যাঁরা ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, তাঁরা এরশাদের নেতৃত্বে আসুন। আমি মনে করি, খেলাফত মজলিস তাদের বিবেকের তাড়নায় এসেছে।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘দেশে এখন চরম অরাজকতা, সুশাসনের অভাব সবখানে। এমন সময়ে খেলাফত মজলিস আমাদের সঙ্গে হাত-মিলিয়েছে। এখন আমরা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমরাই পারবো পরিবর্তন আনতে। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারই সব অন্যায়-অবিচার বন্ধ করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশ হলে বর্তমান কমিশনই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে।’
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে এলে এক ধরনের কৌশল নেবে জাতীয় পার্টি। আর না এলে ৩০০ আসনেই মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি আছে জাতীয় পার্টির। আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। আমাদের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় ইসলাম ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের উদ্দেশ্য ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা। জাতীয় পার্টির একটি জোট আছে, তবে এখনও বলার সময় আসেনি কাদের সঙ্গে নির্বাচনি জোট হবে।’
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন প্রসঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘ছাত্ররা খালি হাতে সড়কে জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল। সন্তানদের মায়ের কান্না আর ছাত্রদের আর্তনাদ যেন দেখার কেউ নেই। সড়কে দুর্ঘটনায় শিশুরা জীবন দেবে, নিরাপদ সড়কের জন্য কোমলমতি শিশুরা আন্দোলন করবে এজন্য তো দেশ স্বাধীন হয়নি।’
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংস করতে পশ্চিমা বিশ্ব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আজ মুসলিম দেশগুলো একে অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ইরাক, ফিলিস্তিন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না। আমাদেরই প্রতিবাদ করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, আমরা আরও শক্তিশালী হচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তির ভিত্তিতে নির্বাচনী সমঝোতা করেন। ছয় দফার চুক্তির উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পবিত্র কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন না করা, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি পুনঃস্থাপন করা, কওমি শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা, সব ধর্মের লোকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সঙ্গেও পাঁচদফা নির্বাচনি চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন আওয়ামী লীগের পক্ষে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এবং খেলাফত মজলিসের পক্ষে সাবেক মহাসচিব মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী। বর্তমানে ইউসূফী ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি হিসেবে আছেন। পরে নানা মহলের সমালোচনায় চুক্তি বাতিল করেছিল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, যিনি ২০১২ সালে মারা গেছেন।সূত্র-আরটিএনএন