
ইভিএম মেশিন কেনার উদ্যোগ বাদ দিয়ে এই খাতের ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আগামী নির্বাচনের ৪৪ হাজার ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের জনগণ যেকোনো মূল্যে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের অপতৎপরতা প্রতিহত করবে।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
এসময় একজন বিদেশি ইভিএম বিশেষজ্ঞকে ভিডিও কনফারেন্স এ নিয়ে আসে বিএনপি। এই বিশেষজ্ঞ ভিডিও কনফারেন্সে ইভিএম’র বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আছে কিনা আমরা বুঝতে পাচ্ছি না। একমাত্র নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালদ্দীনই সব কথা বলছে? মাঝে মধ্যে কমিশনাররা সামনে আসে।’
ইসি সচিব হেলালুদ্দীনকে একটি দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তা হিসেবেও অভিহিত করেন ফখরুল।
তিনি বলেছেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ গণের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং দেশের অধিকাংশ আইটি বিশেষজ্ঞ গণের পরামর্শকে তোয়াক্কা না করে সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করার জন্য তড়িগড়ি করে আরপিও সংশোধন অপকৌশল গ্রহণ করেছে। তাই বিএনপি জনগণের অর্থ লুটপাট ও তাদের ভোটাধিকার হরণের নির্বাচন কমিশনরি ইভিএম ব্যবহারের অপতত্পরতা বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হঠাৎ করে কি ঘটলো? কার নির্দেশে এবং কাকে বিজয়ী করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসি গোপনে এই বিতর্কিত ও সারাবিশ্বে পরিত্যক্ত ইভিএম যন্ত্র কেনার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এই বিতর্কিত যন্ত্র কেনার জন্য ব্যয়িত অর্থ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায় হিসেবে গণ্য হবে। এই অপকর্মের দায়ভার সম্পূর্ণ ইসিকেই বহন করতে হবে।’
অবিলম্বে ইভিএম যন্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগ বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ইসির প্রতি জনগণের আস্থাহীনতাকে আরও ঘনীভূত করবেন না। এ ডিজিটাল কারচুপির পথ থেকে সরে আসুন। অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ব্যক্তিগত এই তৎপরতার চরম মূল্য দিতে হবে। ইভিএম পদ্ধতি বন্ধ করা না হলে দেশে যেকোনো উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য ইসিকে দায়ভার নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে নির্বাচন কমিশন ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ইভিএম যন্ত্র ক্রয় করেছিল। সেখানে আরও ২০ গুন বেশি দামে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে এক-একটি মেশিন ক্রয় করতে হচ্ছে। এটা জনগণের অর্থ লোপাটের আরেকটি উদ্যোগ নয় কি? আসলে সরকারও ইসির একটি অশুভ পার্টনারশিপ। তাদের (সরকার) কথাটা এমন- তোমরা (ইসি) জনগণের অর্থ লোপাট করে খাও আমাদেরকে ভোটে পাশ করিয়ে দাও।’
ইভিএম’র পোল কার্ড এ ভোটারদের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পোল কার্ডের মাধ্যমে ভোটের ফলাফল গণনা করা হয়। যেখানে একটি ডুপ্লিকেট পোল কার্ডও থাকে, ফলে আগে থেকে ডুপ্লিকেট পোল কার্ডে ভোটের ফলাফল সেট করে ভোট গণনার সময় তা ব্যবহার করে ফলাফল পাল্টে দেয়া সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘ব্যালেট পেপার জালিয়াতি রোধে সরকারের মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেদের জন্য অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস স্থাপন করুন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। ভোট গ্রহণকালীন কর্মকর্তাদের সম্মানী ও ঝুকি ভাতার ব্যবস্থা করুন। ভোটগ্রহণকালে ছবি ও ভিডিও ধারণের জন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাচনী অফিসে ভিডিও ক্যামেরা সরবরাহ করুন।’
বিএনপির চলমান ইস্যুকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য ইভিএম বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয়েছে কিনা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সেটা বলব না। সামনে তো একটা নির্বাচন হবেই, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আমরা সেটা গ্রহণ করি আর না করি সেটা মেটেরিয়াল ইস্যু না। প্রশ্ন হচ্ছে- নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহান না করা জনগণের সিদ্ধান্ত নয়।’
‘২০১২ সাল থেকে বিরোধিতা করেছিলাম। এবার নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর সংলাপে অংশ নিয়েও ইভিএম ব্যবহার করা যাবেনা বলে সুস্পষ্ট দাবি জানিয়েছিলাম।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আগামী নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে না বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।