
গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলা কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের উত্তর কঞ্চিপাড়া গ্রামে আত্মহত্যা প্ররোচনায় লিজার মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। এর প্রতিবাদে স্থানীয় সচেতন মহলের উদ্দোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মানববন্ধনে এলাকাবাসী লিজার আত্মহত্যা প্ররোচনাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন।
আজ ২ লা জুলাই সোমবার সকাল ১১টায় কঞ্চিপাড়ার একাডেমিতে লিজার আত্মহত্যার জন্য তার প্রেমিক নাজমুল ও তার মা সহ অভিযুক্ত সকলকে গ্রেফতারের দায়ী করে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন এলাকার সচেতন মহল। মানববন্ধনে লিজার সহপাঠীরা আত্মহত্যা প্ররোচনাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানান।
উল্লেখ্য, গত ২৫জুন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বিয়ের আগে যৌতুক চাওয়ায় নিলুফা ইয়াসমিন লিজা নামে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। এব্যাপারে ফুলছড়ি থানায় মামলা হলেও আজও গ্রেফতার হয়নাই কোন আসামী।পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একই গ্রামের কোরবান আলীর পুত্র নাজমুল মিয়ার সাথে লতিফ মিয়ার মেয়ে লিজার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো দীর্ঘদিনের । উভয় পরিবার ব্যাপারটি জানার পর পারিবারিক ভাবে নাজমুর ও লিজার বিয়ের ব্যাপারটি ঠিক হয় । এরপর নাজমুল লিজার নিকট একটি মোবাইল ফোন পাঠিয়ে লিজাকে বলে তার বাবার নিকট ২ লাখ টাকা যৌতুকের কথা বলতে এবং তা বিয়ের আগে দিতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু লিজার বাবা-মা’র পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা মোটেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পাড়ায় হবো শশুর বাড়ীর লোকজনের অপমানজনক ও আত্ম মর্যাদা ক্ষুণমুলক ভাষায় স্বীকার হয়ে লিজা তার পিতা-মাতার নিকট যৌতুকের এতো টাকার কথা বলতে পারবেনা বিধায় এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। লিজার পরিবারের অভিযোগ লিজা নাজমুলের সাথে মোবাইলে ফোনে কথা বলতে বলতে বিষপান করেন। এলাকাবাসী তা জানতে পেলে মুমূর্ষু অবস্থায় লিজাকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ১১ঘন্টা মৃত্যু যন্ত্রনায় থেকে রাত সারে ৮টায় লিজা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এবং মৃত্যুর আগে প্রেমিকের কাছে লেখা চিঠিতে বিষয় গুলো উল্লেখ্য করেছে। এঘটনায় থানায় মামলা হলেও এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার না করায় যৌতুকের বলি লিজার সহপার্টি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক স্থানীয় জনগনের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মৃত্যুর আগে চিঠিতে যা লিখেছিলো লিজা।
প্রিয়জন,
আশা করি ভালো আছো, আমি কেমন আছি তা কিছুক্ষণ পড়ে জানতে পারবে। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে sorry ভুলবললাম তুমি চাওনি তোমার মা চেয়েছে। আর আমি তাই দিলাম আমি তোমার জীবন থেকে সারাজীবনের জন্য চলে গেলাম। এবার তোমার মা নিশ্চয় খুব খুশী হয়েছে।তোমার মা টাকা ছাড়া বিয়ে করাবেনা, আর আমার মা টাকা দিবেনা। তাই কখনো আমাদের বিয়ে হতেই পারেনা। তাই আমি চলে যাচ্ছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাকে দুংখ দিতে চাইনি। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তোমার মা সবাইকে বলেছে আমি নাকি সাত ছেলে সাথে গোয়া বেচিয়ে তোমায় ধরেছি। এ কথাটি তোমার মা বললো আর তুমি চুপ করে শুনে নিলে এই ভালোবাসো আমাকে। ভালো থাকতে বলবো না ভালো থাকার চেষ্টা কর।তোমাকে নিয়ে অনেক আশা ছিলো সেটা আর পুরুন হলো না এটাই আমার দুংখ। আমার জন্য তোমার মায়ের সাথে আর ঝগড়া করতে হবে না।আমার পরিবারের কেউ আমার মুখ দেখতে চায় না আমি সেই আশাটা পুরুন করলাম।তোমার কাছ থেকে একটা জিনিস চাইবো যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে দিও।তুমি তোমার মায়ের কথা মতো চলো আর মেষ বারের মতো আমাকে দেখতে এসো। তুমি যখন এ লেটারটা পাবে তখন আমি আর হয়তো থাকবো না। ভালো থেকো সুখে শান্তিতে থাকো এই দোয়া করে বিদায় নিলাম।
ইতি,
যে মানুষটা আর নেই