
গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকারকে শাহবাগ থেকে আটক করেছে র্যাব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান।
বুধবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ক্রসফায়ার বন্ধের দাবিতে’ মঞ্চের ঘোষিত কর্মসূচি থেকে তাকে আটক করা হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন কর্মী জানান, বিকেলে কর্মসূচি পালনকালে ইমরান এইচ সরকারকে আটক করে নিয়ে যান র্যাবের সাদা পোশাকধারী ৭-৮ সদস্য। এসময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে র্যাবের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুইজন আহত হন। তারা ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্মসূচিতে যোগ দিতে ইমরান এইচ সরকার বিকেল ৪টার সময় আসেন। এ সময় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের একটা কর্মসূচি চলছিল। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় ঘটনাস্থলে একটি মাইক্রোবাস উপস্থিত হয়।
মাইক্রোবাস থেকে সাদা পোশাকধারী র্যাবের সাত-আটজন সদস্য ইমরান এইচ সরকারকে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। এ সময় র্যাবের চারটি গাড়িও সেখানে উপস্থিত হয়। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বাধা দিতে গেলে র্যাব সদস্যরা তাদের লাঠিপেটা করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইমরানকে আটক করা র্যাব-৩ এর অধিনায়ক এমরানুল হাসান জানান, অবৈধভাবে জনসমাবেশ করার অভিযোগে তাকে আটক করেছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে রবিবার ইমরান এইচ সরকার বলেন, সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসন চলছে। তাদের কোনও জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই। তাদের ব্যবহারে মনে হচ্ছে যে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়।
তিনি বলেন, দেশে মতপ্রকাশের কোনও স্বাধীনতা নেই। কথা বলার অধিকার নেই। সরকারের সমালোচনাকারীকে আটক, গুম ও খুন করা হয়। এমনকি ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার বিষয়ে সংগঠনটির মুখপাত্র বলেন, দেশে কি জরুরি অবস্থা চলছে? সভা-সমাবেশে এতো বাধা কেন? বন্দুকযুদ্ধের নামে সংবিধানবিরোধী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি দিয়েছিলাম। পুলিশকেও অবহিত করা হয়। তবু তারা বাধা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন যে সভা-সমাবেশ করতে ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি লাগে। অথচ আমার জানা মতে, সভা-সমাবেশ করতে চাইলে কারও কোনও অনুমতির প্রয়োজন নেই, পুলিশকে অবহিত করলেই হয়।
তিনি আরও বলেন, বন্দুকযুদ্ধের নামে নির্বিচারে মানুষ খুনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। আগামী ৬ জুন বুধবার বিকেল ৪টায় আমরা আবারও শাহবাগে দাঁড়াব।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মে দিনগত রাত ১টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন টেকনাফ পৌরসভার ৩ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর একরামুল হক। নিহতের পরিবার দাবি করে যে তাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়।
এছাড়া মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপও গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন একরামুল হকে স্ত্রী অায়েশা বেগম।
আরো পড়ুন…
উসকানি দেয়ার অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন ইমরান এইচ সরকার
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে উসকানি দেয়ার অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকার।
আন্দোলনের প্রথম দিন রবিবার আহত এক ছাত্রের মৃত্যুর গুজব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
সূত্র জানায়, ইমরান এইচ সরকার ছাড়াও এ গুজব ছড়ানো হয়েছিল এমন ২০-২৫টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ শনাক্ত করেছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মৃত্যুর গুজব ও উসকানিমূলক পোস্ট দেয়া ২০-২৫টি অ্যাকাউন্ট সাসপেক্ট করা হয়েছে।’
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা ফেসবুকে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এর আগে ইমরান এইচ সরকারের অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে লেখা হয়েছিল, ‘পুলিশের গুলিতে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন’