
দলিত জনগোষ্ঠীর সরকারি চাকুরীতে কোটা ও হোটেল রোস্তারায় প্রবেশ অধিকার নিশ্চিত করার দাবীতে আজ ২৪ মে বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অবলম্বন, জনউদ্যোগ, বিডিইআরএম, হরিজন ঐক্য পরিষদ, হরিজন যুব ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ রবিদাস উন্নয়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের উদ্যোগে এই কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধা সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, কমিউনিস্ট পার্টি জেলা সভাপতি মিহির ঘোষ, জেলা জেএসডি’র সভাপতি লাসেন খান, হরিজন ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি দীলিপ বাশফোর, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক ও জনউদ্যোগে সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী, অঞ্জলী রানী দেবী, সন্তোষ বাশফোর, দধিয়া রবিদাস, রাজেশ বাশফোর, সোহাগ বাশফোর, মিলন রবিদাস, সুনিল রবিদাস, শেফালী রানী দেবনাথ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় জাতপাত অস্পৃশ্যতার কারণে সবচেয়ে পশ্চাৎদ জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। আধা কোটির উপরে দলিত জাতপাতের কারণে শত শত বছর ধরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে শোষিত নিপীড়নের শিকার। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অস্পৃশ্যতার গ্লানি নিয়ে তাদের সমাজে সবচেয়ে নিচু শ্রেণির মানুষের পরিচয়ে পরিচিত করে এবং তারা বঞ্চিত হয় মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে। পেশাজীবী পরিচ্ছন্ন কর্মীরা শিক্ষিত হলেও জাতপাত বৈষম্যের কারণে অন্য পেশায় অংশগ্রহণ বা টিকতে পারে না। যথেষ্ট যোগ্য বা শিক্ষিত হলেও সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে আবেদনকারীকে শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে যোগ্য বলে ধরা হয়।
গত ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল যে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ক্লিনার, সুইপার পদে দলিত পেশাজীবী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ৮০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছিল। এছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এ নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে না।
দলিতদের শিক্ষা ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি দিতে হবে, সরকারি ও বেসরকারি যেকোনো চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে দলিতদের প্রতি জাত-পাত ভিত্তিক বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। দলিতদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিকল্প পেশায় সক্ষমতা ও সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া পযন্ত সরকারি আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পেশায় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বক্তরা আরো বলেন যে, হরিজনদের হোটেল-রেষ্টুরেন্ট এ প্রবেশে বাঁধা দেওয়া হয়। তাদের খাবার দেওয়া হয় খবরের কাগজে বা পলিথিনে মুড়ে। রেললাইন, রাস্তা, ময়লা আবর্জনার পাশে বসে খাবার খেতে অথবা হরিজনদের নিজস্ব আলাদা কাপ, গ্লাস ও প্লেট নিয়ে হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে খাবার গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। এর প্রতিবাদ করলে হোটেল মালিক শ্রমিক দ্বারা চরম নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়।