
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিলেও জোটের সিদ্ধান্তে সরে এসেছে জামায়াত। তবে আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপিকে মেয়র পদে ছাড় দিতে নারাজ জোটের অন্যমত শরিক জামায়াত।
জামায়াতের শীর্ষ নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, সিলেটে যে কোনো মূল্যে মেয়র পদে নির্বাচন করবে। সেক্ষেত্রে তাদের পছন্দের প্রার্থী জামায়াতের মহানগরের আমির এহসানুল মাহবুব যোবায়ের। ইতোমধ্যে জোরেসোরে সিলেটের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন সাবেক এই ছাত্র শিবির নেতা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ি আগামী ৩০ জুলাই সিলেটসহ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (২৯ মে)সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৮ জুন। ১ থেকে ২ জুলাই মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও ৩ থেকে ৫ জুলাই আপিল ও আপত্তি জানানো যাবে। এছাড়া ৯ জুলাই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং ১০ জুলাই প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
২০১৩ সালের ১৫ জুন একসঙ্গে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন এবং ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়েছিল। তবে ভোটের পর একেকটি সিটি করপোরেশনে একেকদিন প্রথম বৈঠক বসে। আর ওই বৈঠক থেকেই করপোরেশনের মেয়াদ শুরু হয়। সে হিসেবে ৫ অক্টোবর রাজশাহী সিটি, ৮ অক্টোবর সিলেট ও ২৩ অক্টোবর বরিশাল সিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে ঢাকা মহানগর (উত্তর) জামায়াতের আমির মুহম্মদ সেলিম উদ্দীন নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করেন। বিএনপিও প্রার্থী ঘোষণা করে গত নির্বাচনে আনিসুল হকের সঙ্গে লড়াই করা তাবিথ আউয়ালকে। ওইসময় নানাভাবে প্রচার প্রচারণাও শুরু করেন সেলিম উদ্দিন। যা নিয়ে তখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তিতে আদালতের নির্দেশে সেই নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেলে এ নিয়ে তেমন আর কথাবার্তা শোনা যায় না। তবে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়ে জামায়াত কার্যক্রম শুরু করলে আবারো আলোচনায় উঠে আসে জামায়াত বিএনপির দূরত্বের খবর।
যা নিয়ে দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়। জোটের বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিকে এ নিয়ে শরিকদের কারো কারো অভিযোগও শুনতে হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত গাজীপুর মহানগর আমীর সানাউল হক মেয়র পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে জামায়াত। পরে যদিও তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।
গাজীপুরে জামায়াতের প্রার্থীতা প্রত্যাহার নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন সিলেটে মেয়র পদে জামায়াতকে ছাড় দিতে হবে শর্তের কথাও শোনা গেছে।
গত কয়েকদিনে জামায়াতের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি গাজীপুরে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা জোটের মনোনয়ন চায়। তারা এ দাবিতে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা সিলেটে বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, ‘সিলেটে আমাদের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। জনপ্রিয়তাও আছে। আশা করি আগামী সিটি নির্বাচনে জোট থেকেও তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে।’
সিলেটে বর্তমান মেয়র বিএনপির। তাকে বাদ দিয়ে আপনাদের প্রার্থীকে যদি মনোনয়ন না দেয় তখন কি হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সব জায়গাতে ছাড় দিচ্ছি। সিলেট আমরা চাই। এখনকার ব্যাপারে আমরা ডিটারমাইন্ড।’
কয়েকদিন আগে এক ইফতারে জামায়াতের এই নেতার সঙ্গে কথা হয়। তখন পাশে বসা সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় এক নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনিও একইসূরে কথা বলেন।
তিনি বলেন, সিলেটে তো আমাদের একজন কাজ শুরু করেছেন অনেক আগে থেকে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।’
পরে তিনি বিস্তারিত জানতে গোলাম পরোয়ারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এই নেতা।
এদিকে সিলেটে সমর্থন পেতে বিএনপিকে যাতে চাপে রাখা যায় সেজন্যও কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে জামায়াত। জানা গেছে, সামনে ঢাকা উত্তরের তাদের সমর্থিত প্রার্থী সেলিম উদ্দিনকে মাঠে রাখবে দলটি। যাতে বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষি করা যায় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
জামায়াত নেতা সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো কাজ শুরু করেছিলাম। এখনো চলছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।’
২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজশাহী ও সিলেটে প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। পরে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থনে সরে দাঁড়ায়। এবার রাজশাহী নয়, শুধু সিলেটকে লক্ষ্য করেছে দলটি।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে ঢাকায় দুই সিটির নির্বাচনে কাউন্সিলর পদ দিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মনোমালিন্য হয়। জোটের সমর্থন না পেয়ে জামায়াত ঢাকার দুই সিটির ৯৩টি ওয়ার্ডের ১৯টিতে এককভাবে নির্বাচন করে একটিতেও জয়ী হতে পারেনি। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জোটের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল জামায়াত।
এদিকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণার আগেই মাঠে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে কাজ করছেন জামায়াত নেতা জুবায়ের। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে দুস্থদের মাঝে সেলাই মেশিন, নগদ অর্থ বিতরণ করছেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছেন। রজমানে ইফতার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েও নিজের প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক এই শিবির সভাপতি।