
‘ভোটে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হলে সেনা মোতায়েন করতে হবে। সেনা মোতায়েন ছাড়া দুই সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। অবিলম্বে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এবং খুলনা সিটির পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় দুই সিটি করপোরেশনেই ভোটহরণের নির্বাচন হবে। সব বাধার পরও এখন পর্যন্ত দুই সিটিতে ধানের শীষের জোয়ার উঠেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ভিপি জয়নাল। এসময় রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যতই মহাপরিকল্পনা করুক না কেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে রিজভী বলেন, দুই সিটিতে নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশ থেকে অস্ত্রধারীদের মজুদ করছে আওয়ামী লীগ। কারণ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকার বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়নি।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, দুই সিটিতেই মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিটিং করছেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, দুই সিটিতে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। শঙ্কা আর শিহরণ ক্ষণে ক্ষণে নৈরাজ্যের ছায়া ফেলছে দুই সিটি করপোরেশনে। এখনো অবাধ, সুষ্ঠু ও ভীতিমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ দূরে থাক সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন। ভোটারদের যাপিত-জীবন এখন আতঙ্কময় সময়ের মধ্যে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও যুক্ত হয়েছে সরকারের অভিলাষ পূরণে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আগামী নির্বাচনে কোন পার্টি এলো বা এলো না তাতে কিছু আসে যায় না, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আদালতের সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে, এখানে সরকারের কিছু করার নেই।
রিজভী বলেন, ‘এটা স্বৈরশাসকের কণ্ঠস্বর। কারণ স্বৈরশাসকরা জনগণকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, কারণে অকারণে জ্ঞান দেয়। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটাই করেছেন। তার গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য হিংসায়-প্রতিহিংসায় আকণ্ঠ আপ্লুত।’
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রিজভী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের দিবাস্বপ্ন আওয়ামী নেতারা দেখতে পারেন, কিন্ত এ দেশে আর একতরফা জাতীয় নির্বাচন হবে না। তাই শেখ হাসিনা যতই মহাপরিকল্পনা করুন না কেন, সেই নীলনকশার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবেন না। পরিবর্তনের ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যের আস্ফালন অন্তর্গত ভীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দায়িত্ব নেন তখন তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা ছিল। স্বাভাবিক গতিতে মামলা চললে উনার যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার জোরে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আপনি ৮১ সালে দলের সভানেত্রী কীভাবে এবং কোন দেশে থেকে হয়েছিলেন সেটা কি আপনার মনে আছে? তখন আওয়ামী লীগে অনেক বর্ষীয়ান নেতা ছিলেন, তাদের ডিঙ্গিয়ে আপনি কীভাবে দলের সভাপতি হয়েছিলেন। আপনি তো আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন না। তারেক রহমান দলে ধাপে ধাপে সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং পরে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবেই জাতীয় রাজনীতির আজকের অবস্থানে উন্নীত হয়েছেন। আপনার এবং আপনার আন্দোলনের ফসলদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত-নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেও তারেক রহমান নিজস্ব আদর্শে অটল থেকে জনগণের মধ্যে আস্থার জায়গাটি পেয়েছেন।’
বিএনপির নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অত্যুগ্র হিংসা তারেক রহমানের দিকে ধেয়ে আসে। অথচ শেখ হাসিনা কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যতিরেকেই সরাসরি আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। প্রধানমন্ত্রী আয়নার দিকে তাকিয়ে কথা বলেন না, এটাই তার সমস্যা।
খালেদা জিয়ার সাজা বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা আদালতের ব্যাপার। কিন্তু আদালত নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রায় এটি। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে হয়, পদত্যাগ করে দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়, সেখানে আদালতের স্বাধীনতা থাকে কী করে? আপনি যতই মিথ্যাচার করুন না কেন, আপনার কথা জনগণ বিশ্বাস করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই-বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেবে না। আপনি যতই কূটকৌশল করেন না কেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে।’