
ডে্স্ক: একেবারে ঠিক শুনেছেন। একাধিক কেস স্টাডি করে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে হাসি নানাভাবে আমাদের শরীরের গঠনে সাহায্য করে। কিন্তু হাসির সঙ্গে শরীরের ভাল-মন্দের কী সম্পর্ক? এই উত্তর খোঁজারই চেষ্টা চালানো হল এই প্রবন্ধের মাধ্যমে।
শুধু শরীরকে নয়, এত চাপের মাঝে মনকে চাঙ্গা রাখতে হাসির কানও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো এই প্রবন্ধে হাসির কিছু উপকারিতার প্রসঙ্গে আলোচনা করা হল।
চলুন তাহলে আর অপেক্ষা না করে খোঁজ লাগানো যাক হাসির নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কে।
১. টি-সেলের ক্ষমতা বাড়ে: এই বিশেষ ধরনের কোষটির শক্তি যত বাড়তে থাকে, তত শরীর ভিতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ-বোগের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আর টি-সেলের ক্ষমতা বাড়ানোর সবথেকে সহজ উপায় কি জানা আছে? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মন খুলে হাসলে টি-সেলের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ জীবনের স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না।
২. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: যখনই দেখবেন রাগ, হতাশা বা দুঃখ মনকে ঘিরে ধরেছে, তখনই এমন কিছু করবেন যাতে খুব হাসি পায়। কারণ মন যখন ঠিক থাকে না, তখন মানসিক চাপ কমাতে হাসিই একমাত্র দাওয়াই হতে পারে।
৩. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: একথা তো আগেই বলেছি যে হাসার সময় আমাদের শরীরে “ফিল গুড” হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই হরমোনগুলি নানাভাবে শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যে কোনও রোগই শরীরকে ছুঁতে পারে না। সেই সঙ্গে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৪. ফুসফুস তরতাজা হয়ে ওঠে: যখনই আমরা হাসি, তখনই ফুসফুস প্রসারিত হয় এবং আমাদের লান্স-এর প্রতিটি কোনা বিশুদ্ধ অক্সিজেনে ভরে যায়। এমনটা যত হতে থাকে, তত সারা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। ফলে নানাবিধ রোগের প্রকোপ হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৫. মন ভাল হয়ে যায়: আমরা যখনই প্রাণ খুলে হাসি, তখনই আমাদের শরীরে সেরাটোনিন এবং এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে নিমেষে আমাদের মন ভাল হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণাও কমে যায়। তাই তো এই দুটি হরমোনকে চিকিৎসকেরা “ফিল গুড” হরমোন বলেও ডেকে থাকেন।
৬. রক্ত চাপ কমায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে হাসার সময় আমাদের সারা শরীরে রক্তের প্রভাব একদিকে যেমন বেড়ে যায়, তেমনি রক্তনালীগুলি প্রসারিত হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শিরা-ধমনীর উপর চাপ কম পরে। আর এমনটা হলে ব্লাড প্রেসার কমতেও সময় লাগে না। তাই প্রেসারের রোগীরা যদি গোমড়ামুখো হন, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
৭. হাসি এক ধরনের শরীরচর্চাও বটে: মানে! হাসির সঙ্গে শরীরচর্চার সম্পর্ক কী? এখানেই তো মজা! একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে হাসার সময় আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি বিপুল পরিমাণে বার্ন হতে থাকে। শুধু তাই নয়, এই সময় পেটেও খুব চাপ পরে। ফলে সব দিক থেকে ওজন হ্রাসের পথ প্রশস্ত হয়। এবার বুঝলেন তো কেন হাসিকে কার্যকরি শরীরচর্চার লিস্টে একেবারে উপরের দিকে রাখা হয়।
৮. শরীর শান্ত হয়: দেহে জমতে থাকা ক্লান্তি, কষ্ট এবং স্ট্রেস এক মুহূর্তে কমে যায়, যখন আমরা প্রাণ খুলে হাসি। আর সবথেকে মজার বিষয় কী জানেন, হাসি থামিয়ে দিলেই যে শরীর আবার স্ট্রেসের মধ্যে চলে আসে, এমন নয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে হাসির প্রভাব আমাদের শরীরে প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, স্ট্রেস কমাতে আগামী দিনে কে আপনার প্রিয় বন্ধু হতে চলেছে।
৯. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: কথায় কথায় হাসলে লোকে বলে বাচাল। কিন্তু এইসব সমালোচকদের জানা আছে কি বেশি হাসলে ব্লাড প্রসার কমে। শুধু তাই নয়, হার্টের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আসলে হাসার সময় আমাদের রক্তনালীগুলি প্রসারিত হয়। ফলে সারা দেহে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গিয়ে শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওটে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমে। তাই তো চিকিৎসকেরা মজা করে বলে থাকেন, “যত হাসবেন, তত হার্ট ভাল থাকবে”। এই কথাটা নিশ্চয় আপনিও শুনেছেন। তাই না!
১০. স্ট্রেস কমায়: হাসির সময় আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত কর্টিজল হরমোনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলে। ফলে হাসির জোয়ারে মানসিক চাপ যে কখন দূরে পালায়, তা বোঝাই যায় না। তাই তো অফিসের পর একটু বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করুন। যত প্রিয়জনেদের সঙ্গে মিশবেন, তত মন ভাল হবে। সেই সঙ্গে দূরে পালাবে মানসিক চাপও।