
‘সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে আদালতের সিদ্ধান্তে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ জামিনের আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিতের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া যেন দ্রুত কারাগার থেকে বের হতে না পারেন, সে জন্য ছলচাতুরী করছে সরকার। এমনকি তাকে ওকালতনামায় পর্যন্ত সই করতে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে, যাতে তিনি কারাগার থেকে বের হতে না পারেন।
ফখরুল বলেন, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল ছাড়া আবার একটি নির্বাচন করতে চক্রান্ত করছে। সে জন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মূলত সরকার একটা ছক তৈরি করেছে কীভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কারাগারে আটকে রাখা যায়।
সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি কমিশনকে (দুদক) লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন আদালত।
নেপালে ইউএস-বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মীর নাসির, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, আবদুস সালাম, এ জে মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।
‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সরকারের সহ্য হচ্ছে না’
‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সরকারের সহ্য হচ্ছে না, তাই উস্কানি দিয়ে বানচালের চেষ্টা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যেভাবে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, তার মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ রুদ্ধ করা যাবে না। এমনকি বিএনপিকেও ভাঙা যাবে না। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ কোনো সংঘাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িত নয়, অথচ তারপরও দলের নেতাকর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দেশটা সরকার পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে লাঠিচার্জ করে দলটির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে মিথ্যা মামলায় আর প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশে সরকারি খরচে নৌকার প্রচার চালাচ্ছেন। তাই আমরা যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি, অবিলম্বে এটি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে। আমরা আশা করছি, নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নেবে। আর যদি তারা সেটা না করে, তাহলে আমরা আগে যে অভিযোগ করেছি, নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে—সেটাই প্রমাণ হবে।’
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার অশান্তি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় দলের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে আগামী শনিবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু বিরোধী দলকে তাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে দেয় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নাকি বাধা দেন না। অথচ আজকের আমাদের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে।’
সরকার নিজেরাই অশান্তি সৃষ্টি করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চেয়ারপারসনকে সাজা দেওয়ার পর থেকে প্রতিটি কর্মসূচি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে করছি। এই দেখে আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ হচ্ছে। তাই আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে অশান্তির সৃষ্টি করছে।’
গত কয়েক দিনে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের নাম উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের ছাত্রদলের নেতা রাজকে যেভাবে গ্রেপ্তার করেছে, তা পৃথিবীর কোথাও করা হয় না। এটা শুধু হিটলারের সময়ে হয়েছে। আমাদের সামনে থেকে কাপড়চোপড় ছিঁড়ে তাঁকে নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া গত পরশু প্রোগ্রাম শেষে শফিউল বারী বাবুকে প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে পিস্তল উঁচিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।’
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে দেশে ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে ব্যবস্থা সরকার সৃষ্টি করল, তা থেকে ফিরে আাসা খুবই দুরূহ ব্যপার হয়ে দাঁড়াবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ।
এর আগে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি পুলিশি বাধার মুখে পণ্ড হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।