
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। এ উপলক্ষে বুধবার সকালে ধানমন্ডিতে বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১৭ সালে স্বীকৃতির পর প্রথম বারের মত এই দিনটি পালন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ৭ মার্চ শুধু বাঙালি জাতির নয়, বিশ্বের দরবারে আত্ম-স্বীকৃতি, মর্যাদা ও গৌরবোজ্জ্বল দিন। আজ তাই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী এক বিশাল জনসভা করা হবে দলটির পক্ষ থেকে। এ জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আবার যেহেতু এটি নির্বাচনী বছর তাই এই জনসভার মাধ্যমে ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারসহ আওয়ামী লীগ তাদের শক্তি দেখাতে চায়। পাশাপাশি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের গণজাগরণ ২০১৮ সালে ৭ মার্চে দেখাতে চায় দলটি। আবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগ দল ঘুছিয়ে নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে যেমন বাঙালি মুক্তিকামী মানুষ ঘর ছেড়ে চলে এসেছিল, তেমনি বঙ্গবন্ধুর কন্যার ডাকেও ঘর ছেড়ে জনসভায় যোগ দেবে। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে উন্নয়নে দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সেই সাথে দেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছে। তাই শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ মার্চের জনসভায় সর্বস্তরের জনগণ যোগ দিবে। সেই সাথে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে। কারণ আগামী নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে,আজকের এই ৭ মার্চ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ দলীয় জনসভা করে দলের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মহাপরিকল্পনা করেছে দলটি। ৭ মার্চ ঘিরে আওয়ামী লীগের সাত দিনের কর্মসূচিতে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উজ্জীবিত মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তবে ওই দিনকে ঘিরে প্রতিদিন বিভিন্ন সভা-সেমিনার করে আসছে কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রীতিম সংগঠন গুলো।
এছাড়া আজকের (৭ মার্চ) জনসভা ঘিরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সেই চিত্রে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ইতিমধ্যেই ছেয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসবভন গণভন পর্যন্ত, ফার্মগেট, ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর, কারওয়ান বাজার, কদম ফোয়ারা মোড়, গুলিস্তান এলাকা, শাহবাগ, টিএসসি, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল,বিজয়নগর ও শান্তিনগর এলাকা ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
এদিকে জনসভাকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জনসভায় যোগ দিতে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পাড়া, মহল্লায় মাইকিং করা হচ্ছে। দাওয়াত দেয়া হচ্ছে জনসভায় যোগ দিতে।
আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। এছাড়া ঢাকার আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেবেন। সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে দলটি।
৭ মার্চের সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হবে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত শনিবার (৩মার্চ) রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ৭ মার্চের আওয়ামী লীগের জনসভা সফল করার জন্য লিফলেট বিতরণ শেষে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
কাদের বলেছেন, পাড়া মহল্লায়, বাড়িতে, মার্কেটে সর্বত্রই আমরা হ্যান্ডবিলের মাধ্যমে প্রচার করছি। এবারের ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মরণকালে সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে। এ লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ করছি। সমাবেশে আমাদের পার্টির সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। এ সময়ের ষরযন্ত্র চক্রান্তের মুখে আমাদের করণীয়, দেশবাসীর করণীয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে জনগণকে তিনি আহ্বান জানাবেন। দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন, সেজন্য আমরা জনগণকে দাওয়াত দিচ্ছি। জনগণকে আমরা সেদিন যতটুকু সম্ভব ভোগান্তির জায়গা থেকে সহনশীল রাখা যায়, সেই চেষ্টা করবো।
এর পরের দিন রবিবার (৪মার্চ) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ৭ মার্চ বাংলাদেশের ৪২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনসভা করা টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছি। আমাদের টার্গেট রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনসভা করার। এ পর্যন্ত আমাদের নেত্রী চারটি বিভাগীয় জনসভা করেছে। এই চারটি জনসভায় বিশাল জনসভায় পরিণত হয়েছিল। যা নজিরবিহীন। আমরা আশা করি গত চারটি জনসভার চাইতেও বিশাল রূপ নেবে আগামী ৭ মার্চের জনসভা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন আর তারই কন্যা শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক মুক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই মুক্তি উন্নয়নের মহাসড়কে আজ আমরা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ভবিষ্যতে যে পরিকল্পনা তিনি এ জনসভার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। যা হয়েছে তিনি তা বলবেন এবং ভবিষ্যতে যা করণীয় সেগুলোও দিক নির্দেশনা দিবেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ আরটিএনএনকে বলেন, সাম্প্রতিক কালের বৃহত্তম জনসভা আমরা করতে চাই। যেখানে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। পুরো ঢাকা শহরে ব্যানার ফেস্টুন, বিলবোর্ড, পোস্টার লাগানো হয়েছে। এছাড়া আমার টেলিভিশনে প্রচার করছি। বহুদিন ধরে কোন দলই জনসভার জন্য মাইকিং করত না। আমরা সেটা করছি। আমরা আশা করছি লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতিকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সমাবেশ আমার করব। তার জন্য ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে জনগণ সমাবেশে যোগ দেবে।
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রচার ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। চারটি বিভাগীয় শহরে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচার করেছেন। এরই অংশ হিসেবে এটিও হবে। আমাদের প্রত্যেকটি সভা থেকে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া হচ্ছে। এই জনসভায়ও নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া হবে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো তুলে ধরে। যেন ভবিষ্যতেও দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকে সেই জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে যেমন মানুষ সমাগম হয়েছিল, এই জনসভায়ও তার কাছাকাছি জনসমাগম করতে আমরা চেষ্টা করব।
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, ৭ মার্চ বাঙালির জাতির জন্য একটি গৌরবময় দিন। কারণ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের পরই মুক্তিকামি বাঙালী দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১৯ মিনিটের ভাষণে সব ধরনের দিক নির্দেশনা ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারকে হত্যার পর ঘতকেরা এই ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা হতে দেয়নি। আমাদের গর্বের বিষয় স্বাধীনতার এতো বছর পরে হলেও ইউনেস্কো এই ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দিনটিকে আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করে রাখতে চাই।’