
শুরুতে মেহেদী হাসান মিরাজের সৌজন্য সাফল্য। পরে দুটি ক্যাচ মিসের হতাশায়ও জড়িয়ে তার নাম। একবার তার হাতে, একবার তার বলে। সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে কুসল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয় ডি সিলভার জুটিতে শীলঙ্কার জবাবটা হচ্ছে দারুণ।
চট্রগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৫১৩ রানের জবাবে শীলঙ্কার রান ১ উইকেটে ১৮৭। শুন্য রানে শীলঙ্কা হারিয়েছিল ওপেনার দিমুথ করুনারত্নেকে। সেখান থেকে পরের ৪৫.৩ ওভারে আর উইকেট হারায়নি তারা। দ্বিতীয় উইকেটে মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়ায় অবিচ্ছিন্ন জুটির রানও ১৮৭।
সবশেষে টেস্টে ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে চতুর্থ ধনঞ্জয়া করেছিলেন ম্যাচ বাঁচানো বীরোচিত সেঞ্চুরি। প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান উপহার দিলেন আরও একটি সেঞ্চুরি। দলে ফেরার টেস্টে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মেন্ডিস।
দিনের শেষটার মত শুরুটাও বাংলাদেশের জন্য ছিল হতাশার। ১৭৫ রানে দিন শুরু করা মুমিনুল হক ফিরে যান আর এক রান যোগ করেই। বাংলাদেশ আরও দুটি উইকেট হারায় দ্রুত। সেখান থেকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ৮৩ রানের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস দলকে নিয়ে যায় পাঁচশ ছাড়িয়ে।
ব্যাটিং থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস ছিল বোলিংয়ের শুরুতেও। নতুন বলে মুস্তাফিজ ও সানজামুল শুরু করেন দুই পাশ থেকে মেডেন নিয়ে। তৃতীয় ওভারে মিরাজকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। এই অফ স্পিনার ফিরিয়ে দেন লঙ্কান টপ অর্ডারের মূল স্তম্ভ দিমুথ করুনারত্নেকে।
বড় রানের বোঝা নিয়ে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ছিল স্বাভাবিক। সে সময় হারাতে পারত তারা মেন্ডিসকেও; যদি মুস্তাফিজের বলে দ্বিতীয় স্লিপে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা নিতে পারতেন মিরাজ।
৪ রানে বেঁচে গিয়েও খুব সাবলীল ছিলেন না মেন্ডিস। তবে তিনে নেমে পাল্টা আক্রমণে সেই চাপ সরিয়ে দেন ধনঞ্জয়া। ধীরে ধীরে তার ব্যাটিংয়ের আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে মেন্ডিসের ব্যাটেও।
ধনঞ্জয়ার পুলগুলো ছিল দারুণ, স্পিনে পায়ের কাজও ছিল দেখার মত। মেন্ডিসের ইনিংস ততটা সৌন্দর্যময় না হলেও টিকে যান। বাড়াতে থাকেন রান।
উইকেটে আগের দিনের চেয়ে একটু সহায়তা পেয়েছে বোলাররা। মাঝেমধ্যে বাউন্স ছিল একটু অসমান। গ্রিপ ও টার্নও হয়েছে একটু। তবে খুব বিপজ্জনক নয়। দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যান খেলেছেনও দারুণ।
মেন্ডিস পরে সুযোগ দিয়েছিলেন ৫৩ রানেও। মিরাজের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে স্লিপে হাতে জমাতে পারেননি ইমরুল। বাংলাদেশ সুযোগ পায়নি আর।
আবেদন অবশ্য অনেকবার হয়েছে। ৬ ওভারের মধ্যে রিভিউ নিয়েছে দল তিনবার। প্রথম রিভিউ হারানোর পর পরেরটা কাজে না এলেও রিভিউ টিকে গিয়েছিল আম্পায়ার্স কলে। একটু পরে হারাতে হয়েছে দ্বিতীয় রিভিউও।
দিনের শেষ ভাগে ধনঞ্জয়া ১২২ বলে স্পর্শ করেছেন সেঞ্চুরি। দিনশেষে ১৫ চারে অপরাজিত তিনি ১০৪ রানে। ১৪ টেস্টেই করে ফেললেন ৪ সেঞ্চুরি। ১৫২ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত মেন্ডিস।
শ্রীলঙ্কাকে অবশ্য এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। তবে এই দুজনের ব্যাট ড্রেসিং রুমকে জুগিয়েয়েছ সাহস। প্রথম দিন শেষে শ্রীলঙ্কার ড্রেসিং রুমে থাকা অস্বস্তির মেঘও দ্বিতীয় দিনে কেটেছে অনেকটা। তবে বাংলাদেশ জানে, তৃতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে ভালোমতোই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫১৩ (১২৯.৫ ওভার)
(তামিম ইকবাল ৫২, ইমরুল কায়েস ৪০, মুমিনুল হক ১৭৬, মুশফিকুর রহিম ৯২, লিটন দাস ০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৮৩*, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৮, মেহেদী হাসান মিরাজ ২০, সানজামুল ইসলাম ২৪, তাইজুল ইসলাম ১, মোস্তাফিজুর রহমান ৮; সুরঙ্গা লাকমল ৩/৬৮, লাহিরু কুমারা ০/৭৯, লাহিরু কুমারা ১/১১২, রঙ্গনা হেরাথ ৩/১৫০, লক্ষণ সান্দাকান ২/৯২, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ০/১২)।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ১৮৭/১* (৪৮ ওভার)
(দিমুথ করুণারত্নে ০, কুসল মেন্ডিস ৮৩*, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১০৪*; মোস্তাফিজুর রহমান ০/৩১, সানজামুল ইসলাম ০/৫২, মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৪৫, তাইজুল ইসলাম ০/৫৬, ০/৩)।