
দ্বন্দ্বের জেরে উত্তরাঞ্চলের ১১জেলার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এই ১১টি জেলা হলো রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও,দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়া।
বুধবার সকাল থেকে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ১১জেলার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গত মঙ্গলবার রাতে বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জরুরি সভা করে এ ঘোষণা দেয়।
ঢাকায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। তবে বগুড়ার ভেতরে লোকাল বাস চলাচল করছে।
জেলা মোটর মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, বগুড়া থেকে ঢাকাগামী ‘শাহ ফতেহ আলী’ বাস নিয়ে এ দ্বন্দ্বের শুরু। এই বাসের বেশির ভাগ মালিক বগুড়ার আর একটি মালিক নওগাঁর। বগুড়ার মালিকপক্ষ নওগাঁর মালিকের বাসটি লক্কড়ঝক্কর অভিযোগ তুলে বন্ধ করে দিতে চায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সাপাহার-বগুড়ার রুটে লিজা ও গীতা বাস চলাচলের বিষয়ের জটিলতাও। এতে বগুড়া-নওগাঁ পথে বাস চলাচল তিন দিন বন্ধ থাকে। পরে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের জরুরি সভায় বিষয়টি নিরসন হয়।
সভায় শাহ ফতেহ আলী বাস আগের মতো করেই চলবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর সোমবার রাতেই নওগাঁ-বগুড়া রুটে বাস চলাচল শুরু হয়। তবে সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে বগুড়া-ঢাকা পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহরের চারমাথায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ঠনঠনিয়ায় ঢাকা বাস টার্মিনাল ও সাতমাথার সব বাসের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মণ্ডল বলেন, ‘ঢাকায় শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টার খুলে দিয়ে সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত ঢাকা-বগুড়া রুটে সরাসরি যেসব কোচ চলাচল করে তাদের আর চলতে দেয়া হবে না। মঙ্গলবার রাতের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বুধবার থেকে তাদের আর চলতে দেওয়া হবে না। এ ঘোষণা মতে আজ সকাল থেকে বগুড়ার উপর দিয়ে কোনো বাস চালানো হচ্ছে না।’
এদিকে ঢাকার বাস মালিক সমিতি-মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানায়, ঢাকা-বগুড়া পথে শাহ ফতেহ আলীর কোনো এসি বাস চলাচল চলতে দেওয়া হবে না। তারা ঢাকায় শাহ ফতেহ আলীর সব বাস বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বগুড়া মালিক সমিতি চায় সব বাসই আগের মতো চলুক। এ দ্বন্দ্বের জেরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জরুরি সভা থেকে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ঢাকার সঙ্গে ১১ জেলার বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় ঢাকা থেকে বগুড়ার কোনো এসি বাস নেই। ননএসি বাসগুলোর ভাড়া ৩৫০টাকা। কিন্তু বগুড়ার শাহ ফতেহ আলী এসি বাসটি এই ভাড়াতেই চলাচল করে। ফলে ঢাকার বাস মালিকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই তাদের দাবি এসি বাস চলতে পারবে না। আর বগুড়ার মালিকপক্ষ চায় আগের মতোই সব বাস চলুক। পরে বগুড়া মালিক সমিতির বিভাগীয় সিদ্ধান্তে অনুযায়ী ঢাকায় চলাচলকারী সব বাস বন্ধ রাখা হয়।
বুধবার সকালে দেখা যায়, ঢাকা যাওয়ার জন্য ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডে কয়েকজন যাত্রী বসে রয়েছেন। কেউ কেউ আবার লোকাল বাসে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন। এরপর ঢাকায় যাবেন। একই অবস্থা দেখা গেছে শহরের অন্যান্য বাসস্ট্যান্ডেও।
কয়েকজন যাত্রী বলেন, নিজেদের দ্বন্দ্বে বাস মালিকেরা ধর্মঘট ডেকেছে। কিন্তু তারা তো আমাদের ভোগান্তির খবর রাখে না! সরকার কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেয় না বলেই এরা (বাস মালিকেরা) মানুষকে জিম্মি করতে পারে।
এদিকে বুধবার সকালের রংপুর বিভাগের একাধিক জেলার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ কেউ বেশি বাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। অনেকে বাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। আবার অনেকে বিকল্প হিসেবে অতিরিক্ত যাত্রী থাকা সত্ত্বেও ট্রেনে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
জানতে চাইলে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকার অসহযোগিতার কারণে উত্তরবঙ্গের ১১ জেলার সঙ্গে ঢাকার বাস যোগাযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আমরা জনগণকে জিম্মি করে কোনো কাজ করতে চাই না।
এবিষয়ে মহাখালী মালিক সমিতির সভাপতির হাজী আবুল কালাম বলেন, ‘বগুড়ার মালিক সমিতির কারণেই সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা নিয়ে বসতে বলা হয় বগুড়ার মালিক সমিতিকে। কিন্তু তারা বসছেন না। আমরা কোনো বাসের কাউন্টার বন্ধ করিনি। বরং তারা বগুড়ায় সব বাস বন্ধ রেখেছে। এমনকি রংপুর-ঢাকা পথের বাস থেকে তারা যাত্রী নামিয়ে নিয়েছে।’
তবে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জের বাস চলাচল করছে। বাস বন্ধ থাকা জেলার অনেক যাত্রী এসব জেলা হয়ে ঢাকায় আসছেন।