
আদালতের রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনের যোগ্যতা হারায়, সেক্ষেত্রে তাকে নির্বাচনে আনার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি এসময় বলেন, বিএনপি নেত্রী যদি আদালতের রায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায়, সেক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির অপরাধী চরিত্র উন্মোচন হওয়ার তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পরিদর্শনে এসে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলী পয়েন্টে সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দণ্ডিত পলাতক আসামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ আবারো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে এবং দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিত রূপ নেবে।
এ সময় সিরাজদিখান উপজেলার চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদসহ দলীয় নেতা-কর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে বিষয়টি আদালতের সেটাতে অহেতুক রাজনীতিতে জড়িয়ে লাভ কী? তারা (বিএনপি) যেটা বলে সেটা বোঝার ভুল। বেগম জিয়া ইলেকশনে যেতে পারবেন কিনা সেটা একান্তই আদালতের বিষয়।’
খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসতে না পারলে বিএনপিও নির্বাচনে আসবে না বলে দলের নেতাদের ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘দেখুন কারো জন্য কিছু আটকে থাকে না।’
‘তারা (বিএনপি) যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে কারও জন্যে নির্বাচনী ট্রেন অপেক্ষা করবে না। সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সকল কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।’
বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলে জানালেও ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে আসতে পারে বিএনপি। আর এর প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন তুলেছেন ওবায়দুল কাদের বিএনপির নীতি নির্ধারক কি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের জানতে বলেন, ‘বিএনপি কি দণ্ডিত ও পলাতক ব্যক্তিকে (তারেক রহমান) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার জন্যেই তাড়াহুড়া করে তাদের সংবিধান পরিবর্তন করেছে? এ প্রশ্নটার জবাব আজ পর্যন্ত দেয়নি। আমি বারবার বলেছি। এ প্রশ্ন তুলতে তারা অন্য দিকে চলে যায়। তারা উল্টো অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি দল ভাঙতে চাইছে, আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি কি আমাদের নীতি নির্ধারক? এসব কথা বলে।’
খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হলে দেশে আগুন জ্বালানোর হুমকি দিয়েছিল বিএনপি। তবে রায়ের পর থেকে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে নমনীয়। আর এ জন্য দলটিকে কটাক্ষ করছেন ওবায়দুল কাদের।
এর প্রতিক্রিয়ায় আবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল তাদেরকে উস্কানি দিচ্ছে।
আপনি কিছু কথা বলে বিএনপিকে সহিংসতার দিকে উস্কে দিচ্ছেন?- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আসলে তাদের ক্ষমতায় কুলাচ্ছে না। ফলে তারা কোন সহিংসতা করতে পারছে না।’
‘তবে এসব করতে গেলে এখন সাধারণ মানুষ প্রতিহত করবে।’
রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির যে কোনো ধরনের কর্মসূচিরই বিরোধী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘এখানে রায় দিয়েছে আদালত আর তাদের আন্দোলন হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। এটার যুক্তি কী? কোন যুক্তিতে এটা করছে তারা? তার অর্থ হচ্ছে তারা আদালতকে মানে না। এটা পরিস্কার বলে দিলেই হয়?’।
বিএনপি রায় না মানলে কেন আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে সে প্রশ্নও রাখেন ওবায়দুল কাদের।
দুর্নীতির মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে দেয়া রায়ের অনুলিপি পেতে বিলম্বের জন্যও বিএনপিকে দায়ী করেন কাদের। তার দাবি, বিএনপি সঠিক নিয়মে দ্রুত আবেদন করেনি বলে এই কপি পেতে দেরি হচ্ছে।
‘আমি কিছু কিছু পত্রিকায় আমি দেখেছি। বিএনপি দ্রুত সত্যয়িত কপি পেতে সঠিক নিয়ম মানেনি। তারা সে পথে যায়নি। সত্যায়িত কপি পেতে দেরি হওয়ার এটাও একটি কারণ।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের আপিল ও জামিন আবেদন আটকে আছে রায়ের অনুলিপি না পাওয়ায়। এরই মধ্যে সাতটি কার্যদিবস পার হয়েছে। আজ সোমবার কপি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বিএনপির আইনজীবীরা। অবশ্য এই আশাবাদ এর আগেও করেছিলেন তারা।
আর রায়ের কপি পেতে বিলম্বের জন্য সরকারকে দায়ী করছে বিএনপি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘রায়ের সত্যয়িত কপি দেবে আদালত। ৬৩২ পৃষ্ঠার একটি রায়। সেখানে দেরি হওয়ার যুক্তিসঙ্গত বিষয়ও আছে।’