1. arifcom24@gmail.com : Arif Uddin : Arif Uddin
  2. admin@khoborbari24.com : arifulweb :
  3. editor@khoborbari24.com : editor : Musfiqur Rahman
  4. hostinger@khoborbari24.com : Hostinger Transfer : Hostinger Transfer
  5. khoborbari@khoborbari24.com : Khoborbari : Khoborbari
  6. khobor@gmail.com : :
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫০ অপরাহ্ন
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনামঃ
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন সংবাদ প্রকাশে বদল: হাজীপুর মহাবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ফিরেছে প্রকৌশল মান ও জবাবদিহি পলাশবাড়ীতে ‘সততা-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ অবক্ষয়ে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা-পুরস্কার বিতরণ গোবিন্দগঞ্জে ৬ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারী গ্রেফতার সাঘাটার উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহাদত হোসেন মন্ডল-এর ইন্তেকাল তফসিল ঘোষণার পর তারাগঞ্জে আচরণবিধি কার্যকরে প্রশাসনের অভিযান অনিয়মের নিদর্শন পীরগঞ্জের হাজীপুর মহাবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ,আইনের চোখে অপরাধ, ঝুঁকিতে ভবিষ্যৎ। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় বিএনপির বিক্ষোভ পলাশবাড়ীতে শিক্ষক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পীরগঞ্জে হাজীপুর মহাবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে আজও বদলায়নি বাঁশ!

বছর জুড়ে আলোচিত রংপুর

  • আপডেট হয়েছে : সোমবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৮
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে

 

ডিসেম্বর শেষ। দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেলো ইংরেজি বর্ষ ২০১৭’র আয়ুষ্কাল। শেষ হলো  পুরান বছরের গপ্পো। শুরু হলো  নতুন বছর ২০১৮। পুরানো ক্যালেন্ডার সরিয়ে জায়গা নিবে নতুন ক্যালেন্ডার। ইংরেজি নতুন বর্ষ বরণে এখন প্রস্তুত বিশ^বাসী। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। নতুন বছর শুরুর আগে এখন বছরের শেষে মনে নাড়া দিচ্ছে কিছু ঘটনা-রটনার রেশ। তাই বছর শেষে, বছর জুড়ে খবরপাড়ার আলোচনায় থাকা ঘটনা-রটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন ‘‘ফিরে দেখা রংপুর-

মধ্যরাতে বেরোবি ভিসির লুকোচুরি
নানা নাটকীয়তার পর মামলার খরগ নিয়ে মধ্যরাতে পেছনের ফটক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসভবন ছেড়ে চলে যান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  (বেরোবি) উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন-নবী। সেদিন ছিলো ৬ মে ২০১৭ শনিবার রাত ১২ টা ২৮ মিনিট।

মিডিয়াকে কিছু একটা আড়াল করে একপ্রকার লুকোচুরি খেলতে খেলতেই সকলের অগোচড়ে বাসভবনের পেছনের ফটক দিয়ে কালো জীপে করে বের হয়ে যান ভিসি। এর আগে রাত ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার ব্যাপারে তিনটি ফাইলে স্বাক্ষর করেন তিনি।

ভিসির এই নাটকীয়তায় ক্ষুব্ধ হন বিভিন্ন চ্যানেল ও পত্রিকার সংবাদকর্মীসহ তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীও। বেরোবি ভিসির এমন পলায়নের সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায়। টেলিভিশন পাড়ার টকশো-তে আলোচনা সমালোচনায় উঠে আসে নূর-উন-নবীর লুকোচুরির গালগল্পো।

ডিসির সই জাল করে ভূয়া ৪০০ লাইসেন্স অস্ত্র ইস্যু  
জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ৪০০ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দেয় অফিস সহকারী সামসুল। লাইসেন্সের বিপরীতে তার দেওয়া ঠিকনাগুলো ছিল ভুল। এ ছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার আগে গোয়েন্দা ও পুলিশের ক্লিয়ারেন্সও জাল করে সে। এ ঘটনায় ডিসির জিএম শাখার অফিস সহকারী সামসুল ইসলাম ও পিয়ন পান্নু মিয়ার নামে গত ১৮ মে ২০১৭’ তে মামলা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস।

মামলাটি দুদকে স্থানান্তর করার পরপরই দুদক সামসুলকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। দীর্ঘদিন পর পুলিশের জালে আটকা পড়ে সামসুল ইসলাম। তাকে নেয়া হয় রিমান্ডে। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। বেড়িয়ে আসতে থাকে ঘটনার নেপথ্যের থাকা রাঘব বোয়ালদের নামও। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীসহ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।

হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া অফিস সহকারী সামসুল অল্প সময়ের মধ্যে রংপুর শহর থেকে সামান্য দূরে বিশাল অট্টালিকা গড়ে তোলেন। ভূয়া স্বাক্ষরে অস্ত্র বিকিকিনির এমন জালিয়াতি নিয়ে টনক নড়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। এ নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে শুরু হয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার। সব মিলে চায়ের দোকানের টেবিল থেকে চার দেয়ালে ঘেরা ব্যয়বহুল প্রসাদের টেবিলেও চলতে থাকে সামসুল ইসলামকে নিয়ে আলোচনা। বহুল আলোচিত এই ঘটনাটি রংপুরসহ সারাদেশে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

ঈদ যাত্রায় মৃত্যুর মিছিলে ১৭ প্রাণ
ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠেছিলো সিমেন্ট বোঝাঁই ট্রাকের ওপরে। শহর ছেড়ে গ্রামের পথে যাত্রা। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার আগেই থেমে যায় ওদের ঈদ যাত্রা। নিমিষেই ঝড়ে যায় ১৭টি তরতাজা প্রাণ।
ঈদ যাত্রায় বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক এই দূর্ঘটনাটি ঘটেছিলো ২৪ জুন। সেদিন শনিবার ভোরে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের কলাবাগান নামক স্থানে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে।

ঘটনাটি রংপুরে ঘটলেও সেদিন মৃত্যু দূতের এমন কালো থাবায় শোকের ছায়া নেমে এসেছিলো লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায়। নিহত ১৭ জন গার্মেন্টস শ্রমিক আর হতাহতদের পরিবারের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে গ্রামের পর গ্রাম।

মেয়র ঝন্টুর ওপর হামলা
রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুর ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনাটি ঘটে ২ জুলাই রোববার। সেদিন বিকেলে রংপুর মহানগরীর গুপ্তপাড়ার নিজ বাসার সামনে সাদ্দাম নামে এক যুবকের হামলার শিকার হন ঝন্টু। এসময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মেয়র। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার পরনের ফতুয়া। উপস্থিত লোকজন ওই যুবককে আটকের পর ধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে দ্রুত জানাজানি হয়ে যায় ঘটনাটি। শহর থেকে গ্রামগঞ্জে সবখানে হামলাকারী যুবক সাদ্দামকে নিয়ে প্রশ্ন জাগে সবার মনে। সাধারণ মানুষ সাদ্দামের হামলার ঘটনাটি আর্থিক লেনদেনের সূত্র বা মেয়রের খারাপ আচরণের বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভাবলেও ঝন্টু এটিকে হত্যা চেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা দেন। হামলার প্রতিবাদে ঝন্টুর ডাকে শুরু হয় আন্দোলন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে সিটি করপোরেশন ভবনে কর্মচারীরা শুরু করেছিলো কর্মবিরতি। ঝন্টুর রাজপথের আন্দোলনে সাড়া দিয়ে ৫ জুলাই বুধবার তৈরি হয়েছিলো তিন মাইল এলাকাজুড়ে দীর্ঘ মানবপ্রাচীর। সেদিন প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ঝন্টু বলেছিলেন, ‘আমাকে মেরে ফেলার জন্যই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলাকারী যুবক জঙ্গি অথবা জেএমবি সদস্য হতে পারে। নির্বাচন থেকে দুরে রাখতেই এই হামলা করা হয়েছে। কারন ৭ ফুট দুর থেকে আমার বুকে লাথি মারা হয়েছে। আমি পড়ে গেলে আমাকে মেরে ফেলতো।’
ঘটনার কিছুদিন পর আদালতের মাধ্যমে আটক সাদ্দামকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো পুলিশ। তবে ঘটনার ক্লু জানাতে পারেনি প্রশাসন। আলোচিত এই ঘটনাটির মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিক ঝন্টুর দীর্ঘদিনের সফলতা ও অর্জনে ভাটা পড়তে থাকে।

মাশরাফি ও রংপুর রাইডার্স
এবারের বিপিএল আসরের চ্যাম্পিয়ন দল রংপুর রাইডার্স। আসর শুরুর আগেই রংপুরের মানুষকে চ্যাম্পিয়ন খেতাবে সম্মানিত করার ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন রাইডার্স প্রধান মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেদিন ছিলো ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার। রংপুর স্টেডিয়াম মাঠে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের প্রীতি ম্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গ্যালারি ভর্তি দর্শককে মাতিয়ে যান মাশরাফি। তার সঙ্গে ছিলো রাইডার্সের অন্যতম খেলোয়ার শাহরিয়ার নাফীস, আব্দুর রাজ্জাক রাজ ও মোহাম্মদ মিঠুন। সেদিন তারা প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরের মধ্যে হুইল চেয়ার বিতরণ করে।

ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে রংপুর স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন মাশরাফি। এসময় গ্যালারিতে বসে থাকা হাজার হাজার দর্শকদের হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন তিনি। পরে মাশরাফিকে সঙ্গে নিয়ে ভিআইপি গ্যালারি বসে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে প্রীতি ম্যাচটি উপভোগ করেন রাইডার্সের খেলোয়াড়রাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক ও রংপুর রাইডার্স প্রধান মাশরাফি বিন মর্তুজার এই আগমনে সেদিন রংপুর উচ্ছসিত ছিলো। এরআগে অবশ্য সাকিল আল হাসান রংপুরে আসলেও বিতর্ক রেখে যান তিনি।

ফেসবুকে ধর্মীয় উস্কানি, অতঃপর ঠাকুরপাড়ায়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি তোলপাড় করে পুরো দেশ। অতীতের মতো ফের সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে উঠে বাংলাদেশ।

টিটু রায় নামে এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্ম অবমাননা স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনাটি নিয়ে রংপুরের পাগলাপীর সলেয়াশাহ এলাকার মানুষ ফুঁসে উঠে ১০ নভেম্বর। সেদিন ছিলো শুক্রবার। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী হওয়ায় সেদিন পরিকল্পিতভাবে মানুষের স্রোত আসতে থাকে অভিযুক্ত টিটু রায়ের বাড়ি অভিমুখে। তিন থানার পর্যাপ্ত পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকার পরও থামানো যায়নি বিক্ষুদ্ধ জনতার হামলা।

পুলিশ ও বিক্ষুদ্ধ জনতার সংঘর্ষ চলাকালে সেদিন ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছিলো। ওই দিন পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এক যুবকের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছিলো পুলিশসহ অন্তত ২০ জন।

ঠাকুরপাড়ার ওই ঘটনায় প্রশাসন নড়ে চড়ে বসেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যেতে মামলায় দুই হাজারের বেশি আসামি দেখানো হয়। টানা কয়েকদিনের সাড়াশি অভিযানে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক হয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা। আসামিদের পাশাপাশি আত্মগোপনে থাকা আলোচিত টিটু রায়ও ধরা পড়েন পুলিশের অভিযানে।

১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনাগ্রাম থেকে রংপুর পুলিশের একটি দল টিটু রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিলো জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সেদিন ক্ষতিগ্রস্থ ঠাকুরপাড়া গ্রাম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিক এ তথ্য জানান তিনি। তবে কবে ও কখন টিটু রায় আটক হয় এ বিষয়ে কিছুই জানান নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুদের বসতভিটেতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির তান্ডব লীলা পরিদর্শনে রংপুরে রেকর্ড সংখ্যক রাজনীতিকের পা পড়েছে। ঠাকুরপাড়ায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নেতারা রংপুর এসেছিলেন। যা ছিলো সংবাদ মাধ্যমগুলোর অন্যতম খবর। নভেম্বরে টেলিভিশন টকশোর আলোচনা জুড়ে টিটু রায়ের স্ট্যাটাস এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাংচুর এবং পুলিশের মামলা নিয়ে চলে যুক্তি তর্ক আর একের পর এক বিশ্লেষণ।

বর্তমানে টিটু রায় কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিকে বিক্ষুদ্ধ জনতার হামলায় অর্থের যোগান ও উস্কানিদাতা হিসেবে গ্রেফতার হওয়া রংপুর জেলা পরিষদের উপ সহকারি প্রকৌশলী ফজলার রহমান রয়েছেন পুলিশী রিমান্ডে। তবে এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছেন টিটু রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা মুদি দোকানী আলমগীর।

রাজনৈতিক উত্তাপে রসিক নির্বাচন
বছর শেষে বছর জুড়ে আলোচনায় ছিলো রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন প্রসঙ্গ। এ নির্বাচনকে নিজেদের সেমি ফাইনাল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধি দলে থাকা জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। অন্যদিকে চমক দেয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বিএনপিও।

৫ নভেম্বর রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বহুল আলোচিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এরপর থেকে নির্বাচনকে ঘিরে ঘটতে থাকে নানান ঘটনা। ব্যালট যুদ্ধের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বেড়েছিলো রাজনৈতিক উত্তাপ, শঙ্কা আর উৎসবের আমেজ। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সবচেয়ে ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রংপুরে। এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ মডেল নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দেন নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিদল ও প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এতে করে রংপুরবাসীও ভালো নির্বাচনের উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে আলোচনায়।

১৮ মার্চ পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সম্মেলনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই ঘোষণার দুই মাসেরও বেশি সময় পর ১৪ জুন এরশাদের পৈত্রিক নিবাস সেনপাড়ার স্কাইভিউ লাঙ্গল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী নিয়ে দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন ছোট ভাই মরহুম মোজাম্মেল হক লালুর পুত্র কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম মহাসচিব, জেলা জাপার তৎকালীন সদস্য সচিব সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলীয় ষড়যন্ত্রকারী দাবি করে তার বিরুদ্ধে বিষোদাগারও করেন।

হঠাৎ আসিফের এমন ঘটনার পর আকাশে ভাসছিলো আসিফ শাহরিয়ারকে জাতীয় পার্টির সকল পদ পদবি থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে এমন উড়োখবর। সেই খবর সত্য হয় ৮ ডিসেম্বর। এর আগে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০ জুন এরশাদ রংপুর জেলা আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে দলের অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক করেন। এর মাধ্যমে এই জেলা জাপার আহ্বায়ক কমিটি থেকে বিদ্রোহকারী ভাতিজা আসিফ বাদ পড়ে যান। শুধু তাই আসিফ এই নির্বাচন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলের প্রাথমিক সদস্যের পদবিসহ সকল পদ-পদবিও হারান।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে ডিসেম্বর জুড়ে রংপুরে শুরু হয়েছিলো দেশের শীর্ষ তিন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের আগমনের হিড়িক। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ দলের শীর্ষ নেতারা আগে থেকেই মাঠ চষে বেড়িয়েছেন মোস্তফার বিজয় নিশ্চিত করতে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরে আসেন প্রতীক রবাদ্দের পর। তারাও ভোটের আগের দিন পর্যন্ত রংপুরের অলিগলি ছুটে বেড়িয়েছেন নৌকার মাঝি ঝন্টুকে বিজয়ের মালা পরিয়ে দিতে। আর বিএনপির শীর্ষ নেতারা এসেছিলেন ভোট উত্তাপের শেষ মূহুর্তে। সবমিলে রসিক নির্বাচনকে ঘিওে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের এমন আগমনের পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীর আগমন রংপুরের মানুষ এর আগে কখনো দেখেন নি।

২১ ডিসেম্বর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর উত্তাপে সরগরম রংপুর সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের ভোট উৎসবে সামিল হয়েছিলেন নগরীর প্রায় তিন লক্ষাধিক ভোটার। ব্যালট যুদ্ধের আগে মাঠের প্রচারণায় বিজয়ের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাই শেষ পর্যন্ত সেমি ফাইনালে অকল্পনীয় জয়ের দেখা পান। প্রায় লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে শোচনীয় ভরাডুবি ঘটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর। এই নিবাচনে অংশ নেয়া সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বিএনপিসহ অন্য পাঁচ মেয়র প্রার্থী ৩৬ হাজারেরও কম ভোট পাওয়ায় বাজেয়াপ্ত হয় তাঁদের জামানত। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো রংপুর থেকেই তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে সংরক্ষিত কাউন্সিলর (মহিলা) হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছিলেন নাদিরা খানম। পরাজয় বরণ করলেও তিনি ছিলেন আলোচনায়।

এই নির্বাচনে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ১৯৩টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল) ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৪’শ ৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা) ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির কাওছার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১’শ ৩৬টি ভোট। এছাড়াও বাকি চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাতপাখা) পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৬ ভোট, বাসদের আবদুল কুদ্দুস (মই) ১ হাজার ২’শ ৬২, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার (আম) ৮’শ ১১ ভোট এবং জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদের ভাতিজা হোসেন শাহরিয়ার আসিফ (হাতি) ২ হাজার ৩’শ ১৯টি ভোট।  এবার রংপুর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ৩ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৭২৩ জন ভোট প্রদান করেছেন। ভোট পড়েছে ৭৪.২৯ শতাংশ।

২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন নতুন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এরআগে ভোটের পরের দিন ২২ ডিসেম্বর রসিকের এই নতুন মেয়র বিজয়ের মালা হাতে নিয়ে পরাজিত মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বাসায় এবং ২৩ ডিসেম্বর কাওছার জামান বাবলার বাসায়ও গিয়েছিলেন। ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভোটের পরেও ছুটে গিয়েছেন তাদের দ্বারে দ্বারে। সবমিলে রংপুরবাসীর কাছে বছর শেষে রসিক নির্বাচন ছিলো সবচেয়ে বড় উৎসবের বছর।

খবরটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এরকম আরও খবর
© All rights reserved © 2025

কারিগরি সহযোগিতায় Pigeon Soft