ইয়েমেনের জনপ্রিয় হুথি আনসারুল্লাহ যোদ্ধারা ঘোষণা করেছেন, সৌদি রাজার প্রাসাদগুলোসহ দেশটির সব তেল ও সামরিক স্থাপনা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যে রয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত একটি সৌদি রাজপ্রাসাদ লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর এ ঘোষণা দিল আনসারুল্লাহ আন্দোলন।
আন্দোলনের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, সৌদি রাজপ্রাসাদে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ রিয়াদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি জনগণের এক হাজার দিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের ফসল।
এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে রাজতান্ত্রিক দেশটির আগ্রাসনের মোকাবিলায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, ‘এক হাজার দিনের পরের প্রতিরোধ হবে আগের চেয়ে ভিন্নরকম।’
শত্রুর বর্বরোচিত আগ্রাসন ও অবরোধের কারণে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে ইয়েমেনের জনগণ ও আনসারুল্লাহ আন্দোলনের দৃঢ় প্রত্যয়ে ফাটল ধরবে না বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলনের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সৌদি রাজার প্রাসাদগুলোর পাশাপাশি দেশটির সবগুলো তেল ও সামরিক স্থাপনা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যে রয়েছে। আমাদের পাল্টা হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে রিয়াদের প্রতি ওয়াশিংটনের পৃষ্ঠপোষকতা কোনো কাজে আসবে না।’
ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলন মঙ্গলবার রিয়াদে সৌদি রাজার আল-ইয়ামামা প্রাসাদ লক্ষ্য করে একটি ‘বোরকান এইচ-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে রিয়াদের আকাশে প্রতিহত করার দাবি করেছে সৌদি সরকার।
ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরুর এক হাজারতম দিনে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। গত এক হাজার দিনে অন্তত ১২ হাজার ইয়েমেনিকে হত্যা করেছে সৌদি আরব। অর্থাৎ গত আড়াই বছরে দিনে গড়ে ১২ জন মুসলমানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মক্কা-মদীনার কথিত খাদেম।
ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় মা’রিব প্রদেশে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আগ্রাসী সৌদি বাহিনীর বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নারী নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) কারামেশ এলাকায় একটি বিবাহ যাত্রীদের ওপর সৌদি বাহিনী হামলা চালালে এসব নারী নিহত হয় বলে দেশটির আল মাসিরা টেলিভিশন চ্যানেল রবিবার জানিয়েছে।
কয়েকটি স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, হতভাগ্য নারীরা পায়ে হেটে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে তারা সৌদি হামলার মুখে পড়ে। তবে যেসব নারী গাড়িতে করে ফিরছিলেন তারা হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
নিহত দুই নারীর একজন পিতা তীব্র ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, একটি বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার সময় সাধারণ নারীদের ওপর হামলা চালিয়ে আগ্রাসী সৌদি বাহিনী জঘন্য অপরাধ সংঘঠিত করেছে।
তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার পরও দারিদ্রপীড়িত ইয়েমেনের ওপর সৌদি সামরিক আগ্রাসন থামছে না। গত শুক্রবারও দেশটির ওপর ব্যাপকমাত্রায় বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ৭০ ইয়েমেনিকে হত্যা করেছে সৌদি বাহিনী। গত দুই বছর ধরে ইয়েমেনের বিভিন্ন এলাকায় বর্বরোচিত বিমান হামলা চালিয়ে আসছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। হামলায় এ পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।