গাইবান্ধার পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক সারোয়ার আলম।
শনিবার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যে টানা অনশন কর্মসূচি চলছিলো তাতে আরো কয়েক হাজার সহকর্মীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তিনিও। খবর বিবিসির
আমরণ অনশনে তার যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার চারজনের একটি পরিবার। যে বেতন পাই সেটা দিয়ে চলে না। খাওয়া-পড়াসহ একেকজন মানুষের জন্য যদি চার হাজার টাকা করেও ধরেন, তবু আপনার টান পড়বে।’
‘ভবিষ্যতের জন্য কোন সঞ্চয় থাকবে না, বছর শেষে আপনি কোন ছুটি পাবেন না। এমনকি কোন প্রমোশনও নেই,’ বলেন তিনি।
শিক্ষক সারোয়ার আলম জানালেন, সবকিছু মিলিয়ে তার মোট বেতন সাড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো। এই টাকা দিয়ে এই বাজারে তার মতো একজন মানুষে ‘আত্মসম্মান নিয়ে টিকে’ থাকা খুব কঠিন।
গত তিন দিনের অনশনে তার চেহারা অনেকটাই মলিন হয়েছে, সঙ্গে মলিন হয়েছে পরনের কাপড়টিও।
সাদা স্ট্রাইপের শার্টটি দেখিয়ে বলছিলেন, ‘আমি কিছুতেই ভাবতে পারি না হাজার টাকা দিয়ে একটা শার্ট কিনবো। ছয়/সাতশো টাকার মধ্যে কাপড়ের মান, টেকসই কিনা এসব অনেক হিসেব মিলাতে হয়’।
তিনি বলেন যে, এই একই অবস্থা তার মতো বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সাড়ে তিন লক্ষ শিক্ষকের।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে এসেছেন সহকারী শিক্ষক আমেনা বেগম। তিনি বলছিলেন, প্রধান শিক্ষকের বেতনের সাথে তাদের বেতনের অনেক তফাৎ।
আমেনা বেগম ব্যাখ্যা করছিলেন, সহকারী শিক্ষকেরা পদের দিক থেকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ে এক ধাপ নিচে, কিন্তু বেতনের দিক থেকে তারা তিন ধাপ নিচে।
তিনি বলছিলেন, বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবীতে এখানে আসলেও তাদের প্রধান দাবী হলো প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের মধ্যকার বেতন গ্রেডের বৈষম্য দূর করা। অর্থাৎ সহকারী শিক্ষকের পদ-মর্যাদা যাতে প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপটিতেই থাকে।
অনশনের তৃতীয় দিনে সোমবার সকাল থেকেই শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অসুস্থ হবার সংখ্যা বাড়ছিল। অনেকেই অজ্ঞান হয়েও পড়ে যান।
যদিও সন্ধ্যা নাগাদ আন্দোলনরত শিক্ষকেরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের আশ্বাসে অনশন ভেঙ্গেছেন।
কিন্তু শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, দাবী আদায়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন তারা।
আর আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আবারো আন্দোলনে নামবেন বলে তারা জানিয়েছেন।